রাজা চট্টোপাধ্যায়, জলপাইগুড়ি :  আঠারো শতকের বাংলার ছিয়াত্তরের মন্বন্তর ও সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের পটভূমিতে লেখা হয়েছিল বঙ্কিমচন্দ্রের 'আনন্দমঠ' উপন্যাস । সেই সন্ন্যাসী বিদ্রোহে জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জের সন্ন্যাসীকাটা গ্রামের বহু সন্ন্যাসী নিহত হন বলে জানা যায় । এ গ্রামের একপাশে বৈকন্ঠপুরের জঙ্গল, আরেক পাশে তিস্তা নদী।  এই বৈকন্ঠপুরের জঙ্গলে আজও লোকমুখে বেঁচে আছেন বঙ্কিমচন্দ্রের দেবীচৌধুরানী ও ভবানীপাঠক। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এবার সেই সন্ন্যাসীকাটা গ্রামে তৈরি হল বিশেষ পর্যটন কেন্দ্র।


সন্ন্যাসী আন্দোলনের উপর ভিত্তি করে আনন্দমঠ লিখে ছিলেন বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।  এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে এবার তৈরি হল পর্যটন কেন্দ্র আনন্দ মঠ ইকো ট্যুরিজম হাব। উত্তরবঙ্গের প্রথম ইকো-ট্যুরিজম হাব এটি। সোমবার উদ্বোধন হয়ে গেল এই দর্শনীয় স্থানের। এদিন অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তেজস্বী রানা, জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বারোপটিয়া নিউ বস গ্রাম পঞ্চায়েতের গৌদি কোন।  শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সহ একাধিক দফতরের আর্থিক সাহায্যে তৈরি হয়েছে এই ইকো-ট্যুরিজম হাব । পুরো কাজ শেষ করতে আপাতত খরচ ধরা হয়েছে  নয় কোটি টাকা।


 শীতের মরশুমে পর্যটক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে এই ইকো ট্যুরিজম হাব।  পার্কটিকে আরো মনোগ্রাহী করে তুলতে আগামীতে আরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা শাসক তেজস্বী রানা। 
  
বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গল, ভবানী পাঠক, দেবী চৌধুরানীর মন্দির, তিস্তা নদী,গৌরী কোন, ভামরী দেবীর মন্দির সহ এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশই পর্যটকদের চুম্বক-টানে টানবে। মনে করছে স্থানীয় প্রশাসন। পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্র মানেই ছোট ছোট দোকান-হাজার গড়ে ওঠা, অর্থাৎ অনেকের কর্ম সংস্থান। তাই নিয়েও ভাবা হয়েছে, জানালেন এসজেডিএর সদস্য তথা বারোপেটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান কৃষ্ণ দাস। 


বর্তমানে এসজেডি-র সদস্য কৃষ্ণ  দাস জানান, ২০১৩ সালে এই জায়গায় একটি ইকো ট্যুরিজম হাব করার পরিকল্পনা নিয়ে সরকারের বিভিন্ন  দফতরে আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন করা হয়। ২০১৯ সালে তিস্তা নদীর পাড়ে ৭০ বিঘা জমি চিহ্নিত করে তার মধ্যে ৪৫ বিঘাতে ১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে ( MGNREGS-এর মাধ্যমে ) মাছ চাষের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল। স্থানটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কটেজ নির্মাণের জন্য পরে সরকারী সহায়তা প্রদান করা হয়।
মাছ চাষ শুরু করা হয়,। এর পরে ওই জায়গার সরকারি সাহায্য পেয়ে কটেজ তৈরির কাজ শুরু করা হয়। পাশেই হাতির করিডর রয়েছে। আপাতত তিনটে কটেজ করা হয়েছে ।পরবর্তীতে আরো ৩০ টি কটেজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। 


 আনন্দ মঠ পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের  আদিবাসী, রাজবংশী সহ বিভিন্ন স্থানীয় জনজাতির কৃষ্টি সম্পর্কে পরিচিত করা হবে।  দেবীচৌধুরানী এবং ভবানী পাঠকের ইতিহাসও জানতে পারবেন পর্যটকরা। মেনুতে অরগ্যানিক পদ্ধতিতে চাষ করা সবজি, তিস্তা নদীর মাছ, স্থানীয় চালের ভাত, চিড়া মুড়ি তো থাকছেই। 


জেলা পরিষদের অতিরিক্ত জেলা শাসক তেজস্বী রানা জানান, এটা একটা গ্রামপঞ্চায়েতের প্রজেক্ট। প্রাথমিক ভাবে তিনটি কটেজ দিয়ে শুরু করা হয়েছে। আগামীতে কটেজের সংখ্যা বাড়ানো হবে। পাশাপাশি বোটিং এর ব্যবস্থাও থাকবে।এছাড়া বার্ড ওয়াচিং সহ বিভিন্ন বিষয় চালু করা হবে।