শুভেন্দু ভট্টাচার্য, কোচবিহার: মাত্র কয়েক দিন আগেই ভাইফোঁটার উপহার পাঠিয়েছিলেন মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তৃণমূল (TMC) নেতাদের হাত দিয়ে মমতার কাছে পাল্টা উপহার পাঠান তিনিও। তাতে বরফ গলতে পারে বলে শুরু হয়েছিল জল্পনা। কিন্তু তার পর এক সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই যাবতীয় জল্পনায় জল ঢেলে দিলেন গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের নেতা অনন্ত রায় ওরফে অনন্ত মহারাজ। জানালেন পৃথক উত্তরবঙ্গ (Separate North Bengal State) গঠন হওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র (Cooch Behar News)। 


মমতার কাছ থেকে ভাইফোঁটার উপহার পেয়েও নিশীথের দ্বারে অনন্ত মহারাজ


শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের (Nisith Pramanik) সঙ্গে দিনহাটায় বৈঠক করেন অনন্ত মহারাজ। প্রায় ৪৫ মিনিট বৈঠক হয় দু'জনের মধ্যে। আর সেখান থেকে বেরিয়েই এমন মন্তব্য করেন অনন্ত মহারাজ। তিনি বলেন, "উত্তরবঙ্গ আলাদা রাজ্য হওয়া সময়ের অপেক্ষা।" তাঁদের এই বৈঠককে যদিও 'সৌজন্য সাক্ষাৎ' বলে উল্লেখ করেন নিশীথ। 


পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্য অথবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবিতে বেশ কিছু দিন ধরেই উত্তপ্ত কোচবিহার তথা উত্তরবঙ্গের রাজনীতি। বিজেপি নেতাদেথর মধ্যে বেশ কয়েক জনকেও তাতে সমর্থন জানাতে দেখা গিয়েছে। সেই আবহেই এ দিন বাড়ি বয়ে গিয়ে নিশীথের সঙ্গে দেখা করেন অনন্ত। দীর্ঘ ক্ষণ কথা হয় তাঁদের মধ্যে। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, "পৃথক রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা। ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে কেন্দ্রীয় সরকার।"


আরও পড়ুন: Ananta Roy: ‘সিদ্ধান্ত হয়েই গিয়েছে, পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্য শুধু সময়ের অপেক্ষা’, নিশীথ সাক্ষাতের পর অনন্ত মহারাজ


এ নিয়ে নিশীথ যদিও কোনও উচ্চবাচ্য করেননি। অনন্তর সঙ্গে সাক্ষাৎকে নেহাত সৌজন্য বলেই উল্লেখ করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, পৃথক রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবি নিয়ে প্রশ্ন করলে জানান, যখন রহবে, তখন সকলে বুঝতে পারবেন। স্বভাবতই এই সাক্ষাৎ নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা উদয়ন গুহর কথায়, "কে কার সঙ্গে দেখা করবেন, সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার তাঁদের। কিন্তু আলাদা রাজ্যের গঠন অলীক কল্পনা ছাড়া কিছু নয়।"


বছর ঘুরলেই বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার পরই আবার ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন রয়েছে।  তার আগে উত্‍সবের মরসুমকে কাজে লাগিয়ে এখন থেকেই তৃণমূল-বিজেপি, দুই শিবির জমি তৈরি করতে ঝাঁপাচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সেই প্রেক্ষাপটেই সম্প্রতি ভাইফোঁটায় অনন্তকে উপহার পাঠান মমতা।  মমতার পাঠানো উপহার নিয়ে অনন্তর বাড়িতে যান তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এবং আলিপুদুয়ার জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি প্রেমানন্দ দাস। মমতার পাঠানো ধুতি-পাঞ্জাবি, দই-মিষ্টি এবং ফুল অনন্তর নেতার হাতে তুলে দেন তাঁরা।  আবার তাঁদের হাত দিয়ে মমতার জন্য উপহার পাঠান অনন্তও। 


পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কোচবিহার এবং উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে জোর চর্চা


কোচবিহারের রাজনৈতিক সমীকরণের ক্ষেত্রে GCPA-র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অনন্তর ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যে কারণে গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ খোদ অনন্তর সঙ্গে দেখা করতে অসমে পৌঁছে গিয়েছিলেন।


চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আবার চিলা রায়ের ৫১২ তম জন্মদিবসে এক মঞ্চে দেখা গিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অনন্তকে। হলুদ উত্তরীয় পরিয়ে তাঁর সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে দেখা গিয়েছিল মমতাকে। সম্প্রতি শিলিগুড়িতে তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চেও উপস্থিত ছিলেন দুই নেতা। তাই ভাইফোঁটায় দু'জনের উপহার বিনিময়ে রাজনৈতিক সমীকরণ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। কিন্তু এ দিন তাতে কার্যতই জল ঢেলে দিলেন অনন্ত। বুঝিয়ে দিলেনস পৃথক রাজ্যের দাবিতে অনড় তিনি।