আমতা ও কলকাতা: আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (Aliah University) ছাত্র নেতা আনিস খানের (Anish Khan) মৃত্যুরহস্য এখনও উদঘাটিত হল না। এখনও এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ (Police)। বিশেষ তদন্তকারী দলের উপর ভরসা রাখতে নারাজ আনিসের পরিবার। সিবিআই (CBI) তদন্তের দাবি জানিয়েছেন আনিসের বাবা সালেম খান। একই দাবি গ্রামবাসীদেরও। এই মৃত্যুর বিচার চেয়ে পথে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। প্রতিবাদে সামিল যাদবপুর (Jadavpur University) ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের (Presidency University) পড়ুয়ারাও।


আজ আনিসের মৃত্যুর প্রতিবাদে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের মহাকরণ অভিযান ঘিরে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে উঠল দক্ষিণ ও মধ্য কলকাতা। দুপুর দুটো নাগাদ পার্ক সার্কাস থেকে শুরু হয় মিছিল। বিক্ষোভকারীদের পরিকল্পনা ছিল পার্ক সার্কাস, মল্লিকবাজার, মৌলালি, এসএন ব্যানার্জি রোড হয়ে ডোরিনা ক্রসিংয়ে পৌঁছবে মিছিল। তারপর মহাকরণে যাবে। অন্যদিকে, পুলিশের পরিকল্পনা ছিল, ডোরিনা ক্রসিংয়েই মিছিল আটকানো হবে। সেই মতো আয়োজনও করা হয়। কিন্তু, সেখানে পৌঁছনোর আগেই, মৌলালি থেকে এসএন ব্যানার্জি রোডের বদলে মিছিল শিয়ালদার দিকে ঘুরে যায়। পুলিশ মিছিল আটকানোর চেষ্টা করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শুরু হয় হুড়োহুড়ি। বাস-গাড়ির মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যেতে শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে রাস্তা। বিক্ষোভকারীদের একাংশ রাস্তায় শুয়ে পড়েন। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে শুরু করে মিছিল। আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের সামনে, মানব-বন্ধন করে মিছিল আটকানোর চেষ্টা করে পুলিশ। শিয়ালদার বিদ্যাপতি সেতুর সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এরপর কলেজ স্ট্রিট মোড়ে গার্ডওয়াল দিয়ে মিছিল আটকানো হয়। তিনজন অ্যাডিশনাল সিপি ও ৬ জন ডিসির নেতৃত্বে নামানো হয় র‍্যাফ ও পুলিশ বাহিনী। মোতায়েন করা হয় জলকামান। এরপরই পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। শুরু হয় ধরপাকড়। আন্দোলনকারীদের চ্যাংদোলা করে তোলা হয় প্রিজন ভ্যানে। ধৃতদের রাতে ছাড়া হল লালবাজার থেকে। সবমিলিয়ে আনিসের মৃত্যুর প্রতিবাদে পড়ুয়াদের মিছিল ঘিরে দিনভর উত্তাল হল রাজপথ।


আরও পড়ুন চ্যাংদোলা করে তোলা হল প্রিজন ভ্যানে, ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিয়ে শেষমেশ মিছিল ছত্রভঙ্গ করল পুলিশ


অন্যদিকে, আনিস-খুনের তদন্তে মুখ্যমন্ত্রী সিট গঠন করলেও, সরাসরি পুলিশে অনাস্থা প্রকাশ করেছে মৃত ছাত্র নেতার পরিবার। সিটের সদস্যদের কাছেই, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন আনিস খানের বৃদ্ধ বাবা। 


পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার রাত ৩.৪২-এ আনিসের বাড়ির লোকজন প্রথমবার আমতা থানায় ফোন করেন। প্রায় একঘণ্টা পরও পুলিশ না পৌঁছনোয়, ৪.৫০-এ ফের তাঁরা থানায় ফোন করেন। হাওড়া গ্রামীণের পুলিশ সুপার আগে দাবি করেন, পুলিশ ভোরেই আনিসের বাড়িতে পৌঁছয়। যদিও, এদিন সিটের সামনে এসপি-র এই দাবি খারিজ করে দেন আনিসের বাবা। পাশাপাশি আনিসের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করে ফের ময়নাতদন্তের দাবিতে সরব হয়েছেন পুত্রহারা বৃদ্ধ। 


এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতিও শুরু হয়েছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনায় হাওড়া গ্রামীণের পুলিশ সুপারকে সাসপেন্ড এবং গ্রেফতার করার দাবি তুলেছেন। পুলিশের  নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বাম-কংগ্রেসও। তবে বিরোধীদের অভিযোগকে গুরুত্ব দিচ্ছে না তৃণমূল।


আনিস হত্যার প্রতিবাদে মঙ্গলবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয় এসএফআই। কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝোলাতেই বেঁধে যায় অন্য অশান্তি। তৃণমূলের শিক্ষা কর্মী সংগঠনের সদস্যরা তালা ভাঙার চেষ্টা করেন। বেঁধে যায় তুলকালাম। সহ উপাচার্য ও অন্যান্য অধ্যাপকরা যান মধ্যস্থতা করতে। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি।


যাদবপুরে অশান্তির আঁচে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসও। আনিস হত্যাকাণ্ডের বিচারের পাশাপাশি যাদবপুরে অশান্তির প্রতিবাদে সুর চড়ান পড়ুয়ারা। 


এদিক, অভিযুক্তদের গ্রেফতারির দাবিতে সন্ধেবেলা আমতায় মোমবাতি মিছিল করেন গ্রামবাসীরা। সেই মিছিল থেকেও সিবিআই তদন্তের দাবি ওঠে।