এরশাদ আলম, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, অনির্বাণ বাগচি, কলকাতা: দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর আদালতের অনুমোদন। অনুব্রত মণ্ডলকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে জেরায় সায়। তাতে যখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সারতে ব্যস্ত এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট, মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বদলে গেল পটচিত্র। এক বছর আগে খুনের চেষ্টার অভিযোগে অনুব্রতর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলেন তৃণমূলেরই এক কর্মী। তার জেরেই আটকে গেল অনুব্রতর দিল্লিযাত্রা। আর তাতেই একরাতে খবরের শিরোনামে উঠে এলেন ওই তৃণমূল কর্মী, শিবঠাকুর মণ্ডল।
কিন্তু অনুব্রতর বিরুদ্ধে অভিযোগকারী এই শিবঠাকুর মণ্ডল আসলে কে? অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার আগে কেনই বা তিনি এক বছরেরও বেশি পুরনো অভিযোগ সামনে আনলেন? তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েতপ্রধান শিবঠাকুরের দাবি, বর্তমানে জেলবন্দি অনুব্রত। তাই সাহস পেয়ে অভিযোগ করেছেন তিনি। কিন্তু অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড়, আর সেই সময়ই পুরনো মামলা খুঁচিয়ে তোলা, দুই ঘটনা নেহাত কাকতালীয় নয়, বরং পরিকল্পনা করেই পুরনো মামলা খুঁচিয়ে অনুব্রতর দিল্লিযাত্রা আটকে দেওয়া হল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
জেলে যাওয়ার আগে প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে শিবের মাথায় জল ঢালতেন অনুব্রত। এমনকি সম্পত্তির খোঁজে নেমে অনুব্রতর যে চালকলের হদিশ পান গোয়েন্দারা, তার নামও মহাদেবের নামে, কোনওটির নাম 'ভোলেব্যোম রাইস মিল', কোনওটির নাম আবার 'শিবশম্ভু রাইস মিল'। ঘটনাচক্রে অনুব্রতর দিল্লিযাত্রাও এ যাত্রায় আটকালেন সেই শিবঠাকুরই, তবে দেবতুল্য কেউ নন, তৃণমূলের কর্মী, যাঁর নাম শিবঠাকুর।
অনুব্রতর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মতো গুরুতর অভিযোগ। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, বিষয়টি সামনে আনা হল এক বছর পরে। তা-ও ঠিক সেই দিনে, যে দিন অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যেতে ইডি-কে ছাড়পত্র দিল রাউস অ্য়াভিনিউ কোর্ট। আর যাঁর অভিযোগের জেরে অনুব্রত মণ্ডল দিল্লির বদলে, আসানসোল থেকে নিজের জেলার থানার লক আপে ফিরলেন, তিনি অনুব্রতর দল তৃণমূলেরই কর্মী, শিবঠাকুর। তাঁর অভিযোগের প্রেক্ষিতেই
অনুব্রতর বিরুদ্ধে দ্রুত জামিন অযোগ্য় ধারায় মামলা রুজু করে, হেফাজতে নিল দুবরাজপুর থানার পুলিশ।
২০১৩ সালে তৃণমূল পরিচালিত বালিজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হন শিবঠাকুর। আড়াই বছর পর অনাস্থা প্রস্তাব এনে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ছয় মাস পর আবার অনাস্থা এনে শিবঠাকুরকে প্রধান পদে ফিরিয়ে আনা হয়। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের আগে পর্যন্ত তিনিই বালিজুড়ি গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন। এক বছর আগে অনুব্রত গলা টিপে তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেন বলে পুরনো অভিযোগই খুঁচিয়ে তুললেন তিনি।
সংবাদমাধ্যমে শিবঠাকুর বলেন, "২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট পাওয়া নিয়ে দলের সঙ্গে সমস্যা হয়। একুশের বিধানসভা ভোটের সময়, বিজেপি-তে যোগ দেব শুনে, দুবরাজপুর পার্টি অফিসে ডেকে পাঠিয়ে অনুব্রত মণ্ডল মারধর করেন। গলা টিপে ধরেন।"
এর মধ্য়ে দলের জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ করায় শিবঠাকুরের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে বীরভূমের তৃণমূল নেতৃত্ব। যদিও, বিজেপি-র গলায় গোটা বিষয়টি নিয়ে শোনা গেছে কটাক্ষের সুর।