বোলপুর: প্রায় দু'বছর জেলবন্দি থাকার পর নিজের গড়ে ফিরেছেন। বাড়ি ফেরা ইস্তক শারীরিক অসুস্থতার কথা বার বার করে জানিয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। কিন্তু বীরভূমের রাজনীতিতে আবারও কি চেনা ভঙ্গিতেই দেখা যাবে তাঁকে?সেই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেলেন বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি। বরং সকলকে নিয়ে চলার, একজোট হয়ে কাজ করার বার্তাই দিলেন। কিন্তু মেয়ের কথা উঠতেই বাবা অনুব্রতর গলায় ধরা পড়ল আক্ষেপের সুর। (Anubrata Mondal)
জামিনে মুক্তির পর বৃহস্পতিবার প্রথম সাংবাদিক বৈঠক করেন অনুব্রত। সেখানে সকলকে নিয়ে চলার বার্তা দেন তিনি। বলেন, "বিধায়ক, সাংসদ, সভাধিপতি, যে যেখানে আছেন, একসঙ্গে সকলে মিলে কাজ করব, মানুষের পাশে থাকব। পুজোটা যাক, কালীপুজোর পর ব্লকে ব্লকে যাব। মিটিং করব। কেউ যেন অশান্তি না করে। সবাই যেন ভাল থাকে, সকলকে নিয়ে যেন চলে। কেউ কিছু গুঁজে দিল (টাকার দিকে ইঙ্গিত), দু'টো বাইক ধরিয়ে দিল, তাতে লাভ হয় না।"(Sukanya Mondal)
শীঘ্রই অনুব্রত চিকিৎসা করাতে কলকাতায় যাবেন বলে খবর। কলকাতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের জল্পনাও চলছে। তিনি কি দেখা করতে যাবেন? জবাব দিতে গিয়েই মেয়ের প্রসঙ্গ টানেন অনুব্রত। বলেন, "নিজের চিকিৎসা করাতে যাব আমি। তবে যাওয়া উচিত বলেই মনে করি। আমার মেয়ে, আমার সন্তান...তাকে ১৬ মাস জেল খাটানো হয়েছে। ও তো কোনও নেতা-নেত্রী নয়! সাধারণ বাড়ির মেয়ে। ঈশ্বরের কাছে আমি যদি কোনও অপরাধ করি, সেই পাপের শাস্তি আমি পেয়েছি। সবাইকে নিয়ে চলব। কেউ ভেদাভেদ কোরো না। মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেকের নির্দেশ। শান্তি বজায় রাখুন। আমি আইনকে ভালবাসি, কোনও বিতর্কে যাব না। সবাই শান্তি বজায় রাখুন। বন্যায় ভাসছে চারিদিক, কৃষির অনেক ক্ষতি হয়েছে। মা দুর্গা বন্যা বন্ধ করুন।"
গরুপাচার মামলায় অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পর গ্রেফতার হন তাঁর কন্যা সুকন্যা মণ্ডলও। প্রায় দু'বছর দিল্লির তিহাড় জেলে বন্দি ছিলেন অনুব্রত, সুকন্যাও সেখানেই ছিলেন। জামিনে মুক্ত হয়ে একসঙ্গেই দিল্লি থেকে বীরভূমের নিচুপট্টির বাড়িতে ফেরেন তাঁরা। সেখানে অনুব্রতর অনুগামীরা উল্লাসে মজলেও, ঘরে ঢুকে চোখের জল ফেলতে দেখা যায় অনুব্রত এবং তাঁর কন্যাকে। মেয়ের কথা বলতে গিয়ে সাংবাদিক বৈঠকেও কার্যত গলা ধরে এল অনুব্রতর।
অনুব্রতর এই মন্তব্য রাজনৈতিক কারণেও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ফেরার পর থেকেই বীরভূমে তৃণমূলের অন্দরে কোন্দল দেখা দিয়েছে বলে খবর। তাঁর অনুপস্থিতিতে পঞ্চায়েত এবং লোকসভা নির্বাচনে সেখানে তৃণমূলকে জিতিয়ে এনেছে কোর কমিটি। কিন্তু অনুব্রতর প্রত্যাবর্তনে সেই কোর কমিটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। দলীয় কার্যালয় অনুব্রতর ছবিতে ছেয়ে যাওয়ায় আরও জোরাল হয়েছে সন্দেহ। সেই আবহে অনুব্রতর উল্টো শিবিরের লোক বলে পরিচিত কাজল শেখ ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা দেন। তিনিও খেলতে জানেন, ঠিক সময়ে সুতো গোটাবেন বলে মন্তব্য করেছেন। ফলে অনুব্রত এবং কাজলের মধ্যে দড়ি টানাটানি কোন পর্যায়ে পৌঁছবে, সেই নিয়ে দলের অন্দরেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে। কিন্তু সাংবাদিক বৈঠক থেকে অনুব্রত জানালেন, সকলের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে চান তিনি।