প্রকাশ সিনহা, বিটন চক্রবর্তী ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: মেঝের কোণে জড়ো করে রাখা টাকার পাহাড়, ড্রয়্যার ভর্তি সোনার গহনা, এখনও বাংলার মানুষের চোখে ভাসছে সেই দৃশ্য। কিন্তু সেই টাকা তাঁর নয়, তদন্তকারীদের এমনটাই নাকি জানিয়েছেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায় (Arpita Mukherjee)! রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) ঘনিষ্ঠ অর্পিতা। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আদালতে জমা দেওয়া চার্জশিটে ইডি জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে অর্পিতা জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া টাকা তাঁর নয়, পার্থর (SSC Case)। 

টাকার পাহাড়, ড্রয়্যার ভর্তি সোনার গহনা, এখনও বাংলার মানুষের চোখে ভাসছে

আদালতে ইডি (ED) জানিয়েছে, অর্পিতার একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতেন পার্থ। কেনা হয়েছিল প্রচুর বেনামি সম্পত্তি। ভুয়ো সংস্থার নামে চাকরি বিক্রির কালো টাকা সাদা করা হতো। অর্পিতার নামে থাকা ৩২টি জীবনবিমার নমিনি ছিলেন পার্থ। অর্পিতার জোড়া ফ্ল্যাট থেকে যে টাকার পাহাড় উদ্ধার হয়েছিল, তাও নাকি ছিল পার্থর, জানিয়েছে ইডি।

অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে নগদে ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার করেছিলেন তদন্তকারীরা। তার পর বেশ কয়েক মাস কেটে গেলেও, এখনও একাধিক প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। অভিনয়ে শিকে ছেঁড়ার অপেক্ষা করছিলেন যে অভিনেত্রী, তাঁর বাড়িতে ওই টাকার পাহাড় এল কোথা থেকে, ওই বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক কে, গহনার ভাণ্ডারই বা কার, এমন হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মনে।

আরও পড়ুন: Movie on Mamata Banerjee: ‘ম্যাডাম আমাকে না ডেকে নিজেই’...নেতা থেকে অভিনেতা হয়ে মমতার কাছে আক্ষেপ শান্তনুর!

সেই নিয়েই চার্জশিটে চাঞ্চল্যকর দাবি করল ইডি। তাদের দাবি, বয়ানে অর্পিতা মুখোপাধ্য়ায় দাবি করেছেন, ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া প্রায় ৫০ কোটি টাকা এবং ৫ কোটি টাকার বেশি মূল্যের সোনা ও গহনার মালিকের নাম পার্থ। গত বছরের ২৩ জুলাই টালিগঞ্জ এবং ২৭ জুলাই বেলঘরিয়ায় অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দু'টি ফ্ল্যাট থেকে নগদ প্রায় ৫০ কোটি টাকা এবং ৫ কোটি টাকার বেশি মূল্যের সোনা ও গহনা উদ্ধার করা হয়। যদিও পার্থ এবং অর্পিতা দু'জনই টাকার সঙ্গে যোগ অস্বীকার করেন। সাংবাদিকদের পার্থ জানিয়েছিলেন তাঁর কোনও টাকা নেই। ইডি-র দাবি ঘিরে প্রশ্ন করলে তাঁর যুক্তি ছিল, "আমার নয়, আমার নয়, আমার নয়। আমি কোনও দিন টাকার লেনদেন করি না।" আবার ওই টাকা তাঁর নয় বলে দাবি করেন অর্পিতাও। কিন্তু চার্জশিটে ইডি জানিয়েছে, প্রথমে একাধিক বার এই টাকা ও গহনা তাঁর নয় বলে দাবি করেন অর্পিতা। ২০২২-এর ৪ অগাস্টের বয়ানে তিনি দাবি করেন, নিজের এবং মায়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রথমে তিনি সত্যি কথাটা বলেননি। অর্পিতা এ রপর দাবি করেন, তাঁর দু'টি ফ্ল্যাট থেকে যে বিপুল নগদ ও সোনা-গহনা উদ্ধার হয়েছে, তার মালিক পার্থ। তাই পার্থই বলতে পারবেন, বিপুল এই টাকা কোথা থেকে এসেছে।

সোনা-গহনা লুকিয়ে রাখার জন্য পার্থকে অনুমতি দিয়েছিলেন অর্পিতাই! চার্জশিটে ইডি আরও দাবি করেছে, ফ্ল্যাটে বিপুল টাকা ও সোনা-গহনা লুকিয়ে রাখার জন্য পার্থকে অনুমতি দিয়েছিলেন অর্পিতাই। ফ্ল্যাট ছাড়াও, অর্পিতার একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতেন পার্থ। সেই অ্যাকাউন্টগুলির মাধ্যমে মোটা টাকা পাচারের পাশাপাশি, সম্পত্তি কেনা ও লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। আর্থিক তছরুপের উদ্দেশ্যেই একাধিক শেল কোম্পানি খুলেছিলেন পার্থ। এই শেল কোম্পানিগুলোর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল চাকরি বিক্রির কোটি কোটি কালো টাকাকে সাদা করা। ইডির দাবি, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের নামে ৩২টি LIC পলিসি রয়েছে। যেগুলির প্রত্যেকটির নমিনিতে রয়েছে পার্থর নাম।