কলকাতা: সামনের বছরের গোড়ার দিকেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন (Panchayat Election 2023) হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। তার আগে বঙ্গ রাজনীতিতে ফিরে এল সিঙ্গুর পর্ব (Singur Movement)। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল (TMC) নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) খোদ সেই প্রসঙ্গ টেনে আনলেন। তাঁর দাবি, টাটাকে তিনি তাড়াননি, তাড়িয়েছিল সিপিএম-ই (CPM)। তাঁর এই মন্তব্য সামনে আসার পরই জোর তরজা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। মমতাকে 'মিথ্যাবাদী' বলে উল্লেখ করেছেন কেউ, কেউ আবার টাটাকর্তা রতন টাটার উক্তি মনে করিয়ে দিয়েছেন মমতাকে।


১৪ বছর আগে রতন টাটার উক্তি হাতিয়ার করে মমতাকে আক্রমণ বিরোধীদের


বুধবার দুপুর থেকে নিজেদের মতো করে রতন টাটার সেই উক্তি তুলে ধরেছেন তৃণমূল বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকরা। কিন্তু কী বলেছিলেন রতন টাটা! ২০০৮ সালের ৩ অক্টোবর সংবাদমাধ্যমের সামনেই সিঙ্গুর থেকে টাটার উৎখাত হওয়া নিয়ে মুখ খুলেছিলেন রতন টাটা। সেখানে তিনি বলেন, "দু’বছর আগে একবার আমি বলেছিলাম, কেউ আমার মাথায় বন্দুর ঠেকালে, হয় সে গুলি চালাবে নয়তো বন্দুক সরিয়ে নেবে, কিন্তু আমি আমার মাথা সরাবো না। আমার মনে হয় মিস ব্যানার্জি ট্রিগারটা টেনেই দিয়েছেন।"


উপলক্ষ ছিল বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠান। বুধবার শিলিগুড়িতে দলের সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেন মমতা। সেখানে আচমকাই সিঙ্গুর পর্ব উঠে আসে তাঁর মুখে। তাতেই কার্যত বিস্ফোরণ ঘটেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মমতার এই দাবি রাজ্য রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে বলেও অত্যূক্তি হয় না। কারণ যে সিঙ্গুর একসময় বাংলার শিল্প-সম্ভাবনার প্রতীক হয়ে উঠতে উঠতেও শেষ অবধি সেই সম্ভাবনার সমাধি ঘটেছে। তার পর থেকে রাজ্যে শিল্প না আসার জন্য বার বার প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে মমতাকে। 


আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: 'আমি নই, টাটাকে তাড়িয়েছে সিপিএম', শিলিগুড়িতে বললেন মমতা


কিন্তু সিঙ্গুর থেকে টাটাকে উৎখাত করার দায় আসলে কার, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে, সেই বিতর্ক কার্যতই উস্কে দিলেন মমতা। কারণ শিলিগুড়িতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, "কেউ কেউ বাজে কথা বলে বেড়াচ্ছে যে, আমি টাটাকে তাড়িয়ে দিয়েছি, টাটা চাকরি দিচ্ছে, আরে টাটাকে আমি তাড়াইনি। সিপিএম তাড়িয়েছে। আপনারা লোকের জমি জোর করে দখল করতে গিয়েছিলেন। আমরা জমি ফেরত দিয়েছি। জায়গার তো অভাব নেই, আমি জোর করে কেন জমি নেব? আমরা এত প্রজেক্ট করেছি, জোর করে তো জমি নিইনি!"


কিন্তু মমতার এই দাবি 'মিথ্যাচার' ছাড়া কিছু নয় বলে দাবি বিরোধী শিবিরের। আর তাতেই রতন টাটার মন্তব্য মমতাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, "শুধু টাটা ভুল করে বলে ফেলেছিল, 'কপালে বন্দুক ঠেকালে কী করব!' সেটা যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কেই বলেছিল, তা বোধহয় মনে নেই ওঁর। এত প্রখর স্মৃতিশক্তি, তাও মনে নেই। এত মিথ্যা কথা বলা কারও পক্ষে সমীচীন নয়, একজন মহিলার পক্ষে তো নয়ই, যিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। বাংলার সর্বনাশ করেছেন উনি। বাংলার যুব সমাজের ভবিষ্যৎ ছিল টাটার ওই কারখানা।"


পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বঙ্গ রাজনীতিতে ফিরল সিঙ্গুর পর্ব


বাংলায় প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, "সবাই দেখেছেন, টাটাকে উৎখাতের পর সিঙ্গুর দিবস পালন করেছিলেন উনি। টাটার তৈরি গাঁথনি, বিল্ডিং সরকারি টাকায় ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কংক্রিটের জঙ্গল উচ্ছেদ করে, সমতল করে সেখানে আলু, ধানের বীজ বন্টন করেছিলেন। বলেছিলেন, কৃষকদের চাষের অধিকার ফিরিয়ে দিলেন। আর টাটা বলেছিল, বন্দুকে ভয় পায়নি তারা। কিন্তু দিদি ট্রিগার টিপে দিলেন। তাতেই ব্য়বসা গোটাতে হল।" তবে সিঙ্গুর নিয়ে এই বিতর্কে আগের মতোই দ্বিধাবিভক্ত সিঙ্গুরবাসী। শিল্প-কৃষি, পাশাপাশি দুই রাখার পক্ষে মমতা সওয়াল করেছিলেন বলে দাবি করছেন তাঁদের কেউ কেউ। এত বছর পর হঠাৎ কেন খেয়াল পড়ল, পঞ্চায়েত নির্বাচন সামনে বলেই কি! এমন প্রশ্নও উঠে আসছে।