সিঙ্গুর: নয় নয় করে পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় দেড় দশক। বদলে গিয়েছে বাংলার রং, রাজনীতি। কিন্তু বঙ্গ রাজনীতিতে সিঙ্গুর (Singur Movement) যে আজও সমান প্রাসঙ্গিক, বুধবার ফের তার প্রমাণ মিলল। শিলিগুড়িতে টাটার (TATA) বিতাড়নের জন্য সিপিএম-কে দায়ী করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata banerjee)। আর তাতেই তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক তরজা। মমতাকে তীব্র আক্রমণ করেছ সিপিএম (CPM), বিজেপি এবং কংগ্রেস। তাঁকে 'মিথ্যেবাদী' বলেও কটাক্ষ করছেন কেউ কেউ। 


টাটাকে তাড়িয়েছে সিপিএম, মমতার দাবিতে বিতর্ক


কিন্তু সিঙ্গুরের সাধারণ মানুষ কী বলছেন! খোঁজ নিয়ে দেখল এবিপি আনন্দ। মমতার দাবি ঘিরে যে বিতর্ক হচ্ছে, তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাইলে সিঙ্গুরের বাসিন্দা এক কৃষক বলেন, "দিদি ঠিকই বলেছেন। উনি তাড়াননি। দিদি বলেছিলেন, ৬০০ একর জমিতে কারখানা হোক টাটার। বাকি ৪০০ একর ফেরত দেওয়া হোক কৃষকদের। সিপিএম তা মেনে নিলে, কৃষকদেরও মঙ্গল হতো, কারখানাও হতো, আর দিদির কথাও থেকে যেত।"


এলাকার অন্য আর এক বাসিন্দার কথায়, "মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় ঠিকই বলছেন। রাজভবনে চুক্তি হয়েছিল, যে অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফেরত দিয়ে বাকি জমিতে কারখানা হবে। তৎকালীন বাম সরকার সেই চুক্তি কার্যকর করলে, এতদূর জল গড়াত না। কিন্তু রাজভবনের চুক্তি হওয়ার পর দিনই শর্ত মানতে অস্বীকার করে তৎকালীন সরকার।"


ক্ষমতাদখলের পর ২০১৬ সালে সিঙ্গুরে টাটা কারখানার ওই জমিতে নিজেহাতে চাষবাসের সূচনা করেন মমতা। নিজে হাতে ছড়িয়ে দেন সরষের বীজ। কিন্তু  কংক্রিটের জঙ্গল ভেঙে সমান করা জমিতে ফসল ফলানোর কাজ সহজতর হয়নি। তাই এক বাসিন্দার কথায়, "যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। এখন শিল্পের দরকার। ওসব নিয়ে আর চিন্তা নেই আমাদের। কী করে জায়গাটা উদ্ধার হবে, সেটাই এখন ভাবনা।"


আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: 'আমি নই, টাটাকে তাড়িয়েছে সিপিএম', শিলিগুড়িতে বললেন মমতা


তবে শিলিগুড়িতে দলের বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চে টাটাদের প্রস্থানের জন্য যে ভাবে সিপিএম-কে দায়ী করেছেন মমতা, তাতে অসন্তোষও প্রকাশ করেন এক স্থানীয় বাসিন্দা। তিনি বলেন, "উনি তো আন্দোলন করলেন! ঠায় বসে রইলেন। জোর করে কারখানা হতে দেবেন না বললেন। তার এত বছর পর এমন খেয়াল এল! বলে দিলেন, সিপিএম তাড়িয়েছে!"


মমতার দাবিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সিপিএমও। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, "মিথ্যায় একেবারে ডিলিট করেছেন, ঘটনাক্রমে তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। উনি যেটা বলেননি এখনও, তা হল, সিঙ্গুর থেকে টাটাকে তাড়ানোর জন্য ধর্নায় বসেছিলেন বুদ্ধবাবু। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ করে দেন, যাতে কোনও ভাবেই সিঙ্গুরে কারখানা গড়তে না পারে টাটা। তার জন্য বুদ্ধবাবুর নেতৃত্বে রাজ্যের বামপন্থীরা, সাধারণ মানুষ ভাঙচুর চালান।"


সিঙ্গুর নিয়ে ফের জোর তরজা বাংলার রাজনীতিতে


প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জনও তীব্র কটাক্ষ করেন মমতাকে। তাঁর বক্তব্য, "ইউনেস্কোকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, ভারতের শ্রেষ্ঠ মিথ্যেবাদী রাজনীতিবিদের তালিকা তৈরি করুন, প্রথমেই তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম লিখবে। সবাই দেখেছেন, টাটাকে উৎখাতের পর সিঙ্গুর দিবস পালন করেছিলেন উনি। টাটার তৈরি গাঁথনি, বিল্ডিং সরকারি টাকায় ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কংক্রিটের জঙ্গল উচ্ছেদ করে, সমতল করে সেখানে আলু, ধানের বীজ বন্টন করেছিলেন। বলেছিলেন, কৃষকদের চাষের অধিকার ফিরিয়ে দিলেন। আর টাটা বলেছিল, বন্দুকে ভয় পায়নি তারা। কিন্তু দিদি ট্রিগার টিপে দিলেন। তাতেই ব্য়বসা গোটাতে হল।"


কিন্তু শিলিগুড়িতে দাঁড়িয়ে মমতা জানান, সিপিএম জোর করে জমি দখল করতে গিয়েছিল। তাঁর সরকার সেই জমি ফেরত দিয়েছে। তাঁর সরকারও অনেক প্রকল্প গড়েছে। কিন্তু জোর করে জমি নেওয়া হয়নি।