সুনীত হালদার, হাওড়া: হাওড়া শহরাঞ্চলে বন্ধ হয়ে গিয়েছে অন্তত ২৫টি সরকারি প্রাথমিক স্কুল! ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়াতেই পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে সরকারি স্কুলে। রয়েছে পরিকাঠামোগত সমস্যাও। এমনটাই মনে করছেন শিক্ষকদের একাংশ। আর এ নিয়ে শুরু হয়েছে চাপানউতোর।


বন্ধ ২৫টি সরকারি প্রাথমিক স্কুল: জরাজীর্ণ স্কুলের জানলা দিয়ে উঁকি দিতেই দেখা যাচ্ছে এই ছবি! ক্লাসরুমের পাহারায় যেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিক্ষকের চেয়ার ফাঁকা, ব্ল্যাক বোর্ডে হিজিবিজি আঁকা যে কবেকার, কেউ জানেন না। স্কুলের গেটে ঝুলছে তালা। এ ছবি হাওড়ার মতিলাল জয়সওয়াল প্রাথমিক বিদ্যামন্দিরের। চাঞ্চল্যকর বিষয় হল শুধু এই স্কুলই নয়। হাওড়া শহরাঞ্চলে এরকমই বন্ধ হয়ে গিয়েছে ২৫টি প্রাথমিক স্কুল। SCC থেকে শুরু করে ২০১৪’র প্রাথমিক টেট, নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে উত্তাল রাজ্য। যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছেন চাকরিপ্রার্থীরা। এই প্রেক্ষাপটে হাওড়ায় একের পর এক প্রাথমিক স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন।


লক্ষ্মীনারায়ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়, শানপুর নেতাজি সুভাষ প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রী ভগবতী প্রাথমিক বিদ্যালয়, শংকরলাল প্রাথমিক বিদ্যালয়-সহ হাওড়ার একাধিক প্রাথমিক স্কুলের গেটে এখন ঝুলছে তালা। কিন্তু কেন? মুখ খুলেছেন শিক্ষক থেকে প্রাক্তনী, সকলে। হাওড়ার লক্ষ্মীনারায়ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা অপর্ণা পাল বলেন, “শহরাঞ্চলে প্রাথমিক স্কুলে ছাত্রের সংখ্যা ক্রমশ কমেছে। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে বাচ্চাদের পড়ানোর প্রবণতা বেড়েছে। প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা কমেছে। ফলে অভিভাবকরা ভরসা রাখতে পারছেন না।’’ ওই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র অমিতাভ গুপ্ত বলেন, “আমিও লক্ষ্মীনারায়ণ প্রাথমিক স্কুলের ছাত্র ছিলাম। টিচারদের অন্যদিকে সরিয়ে দিল। এত কম স্টুডেন্ট, বন্ধ হয়ে গেল।’’


লকডাউনের জেরে গত ২ বছর কার্যত বন্ধই ছিল স্কুল! অর্থাভাবে স্কুলছুটের সংখ্যাও বেড়েছে। এই অবস্থায় একসঙ্গে এতগুলি সরকারি প্রাথমিক স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বৃহস্পতিবার ফেসবুকে লেখেন, “কেন্দ্র সরকারের তথ্য অনুযায়ী শুধুমাত্র স্কুল নয়, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের পদ অবলুপ্ত হয়েছে। হাওড়া জেলায় ২৫টি প্রাথমিক স্কুল বন্ধ করা হয়েছে। এখন ধীরে ধীরে পরিষ্কার হচ্ছে, শিক্ষক নিয়োগে তৃণমূল সরকারের এত অনীহার কারণগুলো।’’


সরব হয়েছে বিজেপিপন্থী শিক্ষক সংগঠন। ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রাইমারি ট্রেনড্ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পিন্টু পারুই বলেন, “স্কুলগুলিকে বেসরকারিকরণ এবং প্রমোটিংয়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। তিনি দাবি করেন অবিলম্বে  স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়নের  পাশাপাশি শিক্ষকদের নিয়োগ যাতে ছাত্রছাত্রীদের কোন অসুবিধা না হয়।’’


যদিও প্রশাসন ও শাসকদলের দাবি, পড়ুয়া না থাকায় আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুলগুলো। তৃণমূল নেতা তথা হাওড়ার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান বলেন, “এই স্কুলগুলো ভাড়া বাড়িতে ছিল। ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা একেবারে কমতে কমতে শূন্যতে দাঁড়ায়। তাই ২৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। পরে ছাত্র এলে চালু করা হতেও পারে। কয়েকটি নতুন প্রাথমিক স্কুল চালু করা হয়েছে।’’ কবে খুলবে স্কুলগুলি? প্রশ্ন আছে, তবে উত্তর নেই!


আরও পড়ুন: Plastic Ban: ৭৫ মাইক্রনের নিচে প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা, কতটা সচেতন কলকাতার বাজার?