সমীরণ পাল: বিয়ের বহু বছর পার হলেও দীর্ঘদিন নি:সন্তান দম্পতি। এরপর বিশ্বাস থেকেই ঈশ্বরের কাছে সন্তান চেয়ে মানত করেছিলেন। আর তা পূরণ হতেই মানত পালনের লক্ষ্যে এবার বুকে হেঁটে কেদারনাথের পথে পাড়ি দিলেন বাদুড়িয়ার শম্ভু কাহার। দণ্ডবৎ হয়ে এই বিরাট পথ পাড়ি দেওয়ার দৃশ্য দেখে সকলেই অবাক।  

বুকে হেঁটেই এভাবে শম্ভু যাচ্ছে শিবের কাছে কেদারনাথ! শিব ভক্তের এমন কষ্টসাধ্য ১৬০০ কিলোমিটারের দুর্গম পথের যাত্রা এখন নজর কেড়েছে সকলের। ইতিমধ্যেই সোশাল মিডিয়াতেও ভাইরাল যুবকের এই কর্মকাণ্ড। বুকে হেঁটে অর্থাৎ দণ্ডি কেটে কেদারনাথ যাত্রায় বেরিয়েছেন বাদুড়িয়ার শিবভক্ত শম্ভু কাহার। মানত পূরণের কারণেই দীর্ঘ এই যাত্রাপথ দণ্ডি কেটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত শম্ভুর বলেই জানান।

গন্তব্য কেদারধাম হলেও, সে পথ সাধারণ ভাবে নয়, শিব ভক্ত শম্ভু দণ্ডি কেটেই দীর্ঘ এই যাত্রাপথ সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন। জানা যায়, বিবাহিত জীবনে একাধিকবার সন্তান এলেও তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে, মহাদেবের কাছে শম্ভু মানত করেন, সুস্থ সন্তানের জন্ম হলে তিনি দণ্ডি কেটে কেদারনাথ যাবেন। অবশেষে সুস্থ পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। বর্তমানে পুত্রের বয়স ৩ বছর। তাই এবার নিজের দেওয়া কথা রাখতেই শুরু করেছেন কষ্টসাধ্য এই কেদার যাত্রা।

প্রতিদিন কয়েক কিলোমিটার করে রোদ, বৃষ্টি, কাদা উপেক্ষা করে এগিয়ে চলেছেন দেবাদিদেবের শরণে। এদিন মছলন্দপুরের নকপুল এলাকায় দেখা যায় তাঁকে। গা হাত পায়ে মাখা কাদা,  কোন দিকে না তাকিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গেই দণ্ডি কেটে একটু একটু করে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন শম্ভু। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, এর আগে বহুবার পায়ে হেঁটে কেদারনাথ যাত্রা দেখতে পাওয়া গেলেও এভাবে বুকে হেঁটে অর্থাৎ দণ্ডি কেটে এমন দীর্ঘ যাত্রা একেবারেই বিরল। তাঁকে দেখতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ছেন বহু মানুষ। কেউ দিচ্ছেন দক্ষিণা, কেউ খাওয়ার জন্য ফল, কেউ আবার এসে তার পায়ে হাত দিয়ে প্রণামও করছেন। 

শিব ভক্ত শম্ভু জানান, রাত্রিবাসের জন্য তিনি বেছে নিচ্ছেন চলার পথে স্থানীয় কোন ক্লাব অথবা কোন মন্দিরকে। সারাদিনের পরিশ্রমের পর একটু বিশ্রাম। খাদ্যাভ্যাসেও চলছে কঠোর নিয়ম। এই দীর্ঘ যাত্রাকালীন সময়ে শুধুমাত্র নিরামিষ ও ফল গ্রহণ করছেন শম্ভু কাহার। তবে নিজের লক্ষ্য পূরণে যেন অবিচল এই যুবক। দেবাদিদেব মহাদেবের নাম স্মরণ করেই তাই এখন শম্ভু ছুটেছে কেদারনাথের পথে।