ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বীরভূম: বগটুইকাণ্ডে স্বজনহারাদের সাহায্য করেছি। তাও তাঁদের কয়েকজন অন্য দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন! শুক্রবার দলীয় বৈঠকে এমনই আক্ষেপ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই প্রসঙ্গেই এবার মুখ খুললেন বগটুইকাণ্ডের স্বজনহারাদের একাংশ। তাঁদের পাল্টা দাবি, মুখ্যমন্ত্রী বগটুইয়ের পাশে দাঁড়ালেও, খোঁজ রাখেন না দিদির দূতেরা! এই নিয়ে তরজায় জড়়িয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি।


মুখ খুললেন বগটুইকাণ্ডের স্বজনহারাদের একাংশ: বীরভূমের বগটুইয়ে, হাড়হিম করা হত্যাকাণ্ডের বছর ঘুরেছে। কিন্তু, বগটুই নিয়ে বন্ধ হয়নি রাজনীতি। সরকারি উদাসীনতার অভিযোগে স্বজনহারাদের একাংশ ক্ষুব্ধ। তার আঁচ টের পেয়েছেন খোদ শাসকদলের বিধায়ক। সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে, শুক্রবার বীরভূম জেলার নেতাদের সামনে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আক্ষেপ করে বলেন, 'বগটুইয়ের জন্য কী করিনি। ওদের চাকরি দিয়েছি। ক্ষতিপূরণ দিয়েছি। সামাজিক প্রকল্পগুলোতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দিয়েছি। তারপরেও ওদের কয়েকজন অন্য দলের সঙ্গে চলছে।' স্বজনহারা শেখলাল শেখ বলেন, “মমতাদি আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, দিয়েছেন। কিন্তু ব্যাপার হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর পরে, নিচের স্তরের যে নেতা আছেন, বা আমাদের এখানে যাঁদের দায়িত্ব দিয়েছেন, বিগত একবছর হয়ে গেল, তারা কোনওদিন আমাদের খোঁজ নেয়নি বা পাশে এসে দাঁড়ায়নি।’’


গত বছর ২১ মার্চ সন্ধেয়, বগটুইয়ে খুন হন তৃণমূলের উপপ্রধান ভাদু শেখ।এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বগটুইয়ে সংগঠিত হয় ভয়ঙ্কর হত্যালীলা। ১০ জনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ৩ দিনের মাথায়, বগটুইয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর উপস্থিতিতে নিহতদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় ক্ষতিপূরণের চেক।এছাড়াও, মৃতদের পরিবার থেকে ১ জন করে সদস্যকে চাকরিও দেয় রাজ্য সরকার।


বগটুই হত্যাকাণ্ডে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগের নেপথ্যে উঠে আসে তৃণমূলের রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লকের তৎকালীন সভাপতি আনারুল হোসেনের নাম। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে, আনারুলকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। কিন্তু এ সত্বেও কেন বগটুইয়ে স্বজনহারাদের একাংশ সরকারের ওপর অসন্তুষ্ট? আরেক স্বজনহারা মিহিলাল শেখ বলেন, “দিদির দূতরা তো বাড়ির পাশ দিয়ে অন্য গ্রামে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের কাছে আসে না। শতাব্দী রায় গ্রামে এসে, যে ক্রিমিনাল, যে আমাদের পরিবারটাকে আগুন লাগিয়ে, খুন করে, মূল অভিযুক্ত, তার বাড়িতে দিদির দূতরা সহানুভূতি দেখাতে আসে, তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে আসে, সেই দূত আমাদের বাড়িতে আসে না। দিদির দূতরাই তো দলটাকে শেষ করল।’’


এই প্রেক্ষাপটে, বগটুইকাণ্ডে তৃণমূলের ভূমিকা নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছে বিজেপি। বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার  সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, “তৃণমূলের নিচুস্তরের লোকেরা, বগটুইয়ের সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি, আমরা ওখানে মাত্র ১৭ খানা ভোট পেয়েছিলাম। কিন্তু মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন আছে বলে মনে করেছি। নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। সেই জন্য তারা আমাদের সঙ্গে আসছে’’

আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee: আগামী ২৯ মার্চ শহিদ মিনারেই হচ্ছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা