করুণাময় সিংহ ও ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, কলকাতা : ধরা পড়ার পড়ার ঠিক পর মুহূর্তেই ঠাণ্ডা গলায় সবার প্রথম প্রশ্নটাই ছিল 'সুতপা কি মারা গেছে?' নির্লিপ্ত, অনুশোচনাহীন, ভাবলেশহীনভাবে সুরে পুলিশকে  (police) এই প্রশ্নই করেছিল সুশান্ত চৌধুরী।


কিছুক্ষণ আগেই যে এভাবে কুপিয়েছে তাঁরই একদা বন্ধুকে, তাঁর বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ-বিক্ষোভ-প্রতিহিংসা কোথা থেকে এল? যাঁকে ভালবেসেছিল তাঁকেই কেন এভাবে শেষ করল? বহরমপুর কাণ্ডের (baharampur killing) ভয়াবহতা যখন নড়িয়ে দিয়েছে রাজ্যকে তখন ঘটনাক্রম নিয়ে কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা? মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জয়রঞ্জন রাম বলছেন, 'পুরুষতান্ত্রিক সমাজে অনেকের ধারনা, ব্রেক আপ হয়ে গেল, ও আমার হয়নি, ও কারও হতে পারবে না'। এদিকে, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও পি সিংহ বলেছেন, 'ছেলেরা অনেক সময় পজেসিভ হয়ে যায়'।


মানসিক হতাশায় ভুগছিল সুশান্ত


ফেসবুক পোস্ট কিংবা ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপের স্টেটাস! বহরমপুরে ছাত্রী খুনে ধৃত সুশান্ত চৌধুরীর বিভিন্ন সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডলের ছত্রে ছত্রে মানসিক হতাশার ছাপ।


১৯ এপ্রিলের এই ফেসবুক পোস্টে সুশান্ত লিখেছিল, যারা পরিবারের অমতেই বিয়ে করছেন, তারা যেন মনে রাখেন, সব পরিবারকে বোঝানো যায় না! সেই সমস্ত পরিবারের সদস্যদের কুকুর বলেও সম্বোধন করে সুশান্ত!


২০২১-এর ১৩ জুন সুশান্ত ফেসবুক পোস্টে লেখেন, একদিন তো সবাইকে মরতে হবে। কেউ আগে মরে, কেউ পরে মরে। কোনও পোস্টে সুশান্ত লিখেছে, আজকাল মেয়েদের বিশ্বাস না করাই ভাল! মার্চের ২৫ তারিখ ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করেন সুশান্ত! যার বয়ানের ছত্রে ছত্রেও ছিল আক্ষেপ।


সম্পর্কছেদই কি মানসিক হতাশার কারণ?


স্থানীয় সূত্রের খবর, সুশান্তর বাড়ি মালদার বলরামপুরে। কিন্তু ছোট থেকেই সে থাকত ইংরেজবাজারের এয়ারভিউ কমপ্লেক্সে পিসির বাড়িতে। সুতপার সঙ্গে সুশান্তর পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। একসময় সুতপার বাবার কাছে টিউশনও পড়ত সে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, ৪-৫ বছর আগে সুশান্ত ও সুতপা প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। তবে অচিরেই সেই সম্পর্কে চিড় ধরে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, গতবছর দুর্গাপুজোর পঞ্চমীর দিন সুশান্ত আর সুতপার মধ্যে ব্যাপক অশান্তি হয়। যার জেরে সুতপার বাড়িতে পর্যন্ত চড়াও হয় সুশান্ত! যে ঘটনার জল গড়ায় স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছ অবধি! মৃত ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, এরপরও সুতপার পিছু ছাড়েনি সুশান্ত! 


সুশান্ত আর সুতপার মধ্যে কি তৃতীয় কেউ ঢুকে পড়েছিল? সুতপা ও সুশান্তর সম্পর্ক কি মানতে চায়নি দুই পরিবার? সম্পর্কের টানাপোড়েনের এই অধ্যায় শেষ হল দু-দু’টি স্বপ্নের অপমৃত্যু দিয়ে! আর যে পরিণতি ও তার পরের ঘটনাক্রম দেখে ক্রমশ শিউরে উঠছেন সকলে।


আরও পড়ুন- ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা ! সুতপাকে মেরে পালাতে আগেই পাঁচিলের পেরেক বাঁকিয়ে রেখেছিল সুশান্ত