সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুগলি: রাঘব বোয়াল থেকে চুনো পুঁটি, রুই, কাতলা, ইলিশ, ভেটকি, ভোলা, শংকর মাছ থেকে কাঁকড়া কি নেই এই মেলায়। সব ধরনের মাছ পাওয়া যায় ব্যান্ডেলের দেবানন্দপুরের কেষ্টপুরের মাছের মেলায়। সেই মেলায় মাছ কিনতে ভিড় জমে বহু মানুষের।


চৈতন্য মহা প্রভুর অন্যতম শিষ্য রঘুনাথ দাস গোস্বামীর বাড়ির পাশে বসে ৫১৮ বছরের পুরানো এই মাছের মেলা। একদিনের এই মেলাকে কেন্দ্র করেই বিভিন্ন জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসে দোকানিরা। এই মেলা উত্তরায়ণ মেলা যা মাছের মেলা নামেই পরিচিত।


জানা যায়, মেলা শুরু হয়েছিল গোবর্ধন গোস্বামীর ছেলে রঘুনাথ দাস গোস্বামী বাড়িতে প্রত্যাবর্তনের পরই। কেষ্টপুর এলাকার জমিদার ছিলেন গোবর্ধন গোস্বামী, তারই ছেলে রঘুনাথ সংসার ত্যাগ করেন সন্ন্যাস নিতে। তিনি মহাপ্রভূ চৈতন্যের পারিষদ নিত্যানন্দের কাছে দিক্ষা নেবেন বলে তার কাছে যান পানিহাটিতে। তবে তার বয়স তখন মাত্র ১৫ হওয়ায় তাকে তিনি দীক্ষা দেননি নিত্যানন্দ। তার ভক্তির পরিক্ষা নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন। 


দীর্ঘ ৯ মাস পর বাড়ি ফেরে রঘুনাথ। সেই আনন্দে বাবা গোবর্ধন গোস্বামী গ্রামের মানুষকে খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। গ্রামের মানুষ তার ভক্তির পরীক্ষা নেওয়ার জন্য কাঁচা আমের ঝোল ও ইলিশ মাছ খাওয়ার আবদার করে। তিনি ভক্তদের বলেন, বাড়ির পাশে আম গাছ থেকে জোড়া আম পেড়ে আনতে এবং পাশের জলাশয়ে জাল ফেলতে। সেই অনুযায়ী জাল ফেলতেই মেলে জোড়া ইলিশ ও আম, অবাক হয়ে যান গ্রামের মানুষ। সেই থেকে প্রতি বছর ভক্তরা রাধা গোবিন্দ মন্দিরে পুজো দেওয়ার পাশাপাশি মাছের মেলার আয়োজন করে। আজ পয়লা মাঘ উত্তরায়ণে এই মেলা চলে আসছে বছরের পর বছর। দূর দূরান্ত থেকে বহু মাছ ব্যবসায়ী নদী পুকুর ছাড়াও বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের পসরা নিয়ে বসেন। 


হুগলি ছাড়াও বর্ধমান, হাওড়া, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা,বাঁকুড়া থেকেও মানুষ এই মেলায় আসেন। ৫০০ টাকা থেকে দের হাজার দু হাজার টাকা কেজি দরে মাছ বিক্রি হয়। শুধু মাছ কিনেই নিয়ে যায় না।অনেকেই পাশের আম বাগানে মাছ দিয়ে পিকনিকের আয়োজন করেন। নাগরদোলা থেকে বাচ্চাদের খেলনা, জিলিপি-মিষ্টির দোকানেও চলে বিকিকিনি। শীতের আমেজ গায়ে মেখে জমজমাট হয়ে ওঠে মাছের মেলা।



আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে