রাজা চট্টোপাধ্যায়, জলপাইগুড়ি: ভুয়ো ভারতীয় পাসপোর্ট কাদের হাতে চলে গিয়েছে? ভুয়ো শংসাপত্র তৈরি করতে কি পোস্ট অফিসের মতো পুরসভাগুলিকেও ব্যবহার করা হচ্ছে? মাল পুরসভাকে দেওয়া সিবিআইয়ের চিঠি ঘিরে সামনে এল চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। তবে কি সর্ষের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে ভূত? উঠছে এই প্রশ্নই।
পোস্ট অফিসের মতো পুরসভার কর্মীদের একাংশও কি জাল পাসপোর্ট চক্রের সঙ্গে যুক্ত? দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গেও কি সক্রিয় পাসপোর্টচক্র? সম্প্রতি, মাল পুরসভার চেয়ারম্যানকে সিবিআইয়ের পাঠানো চিঠি ঘিরে উঠতে শুরু করেছে এই প্রশ্নগুলোই। ১৮ই নভেম্বর, মাল পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন সাহাকে একটি চিঠি পাঠায় সিবিআই। দিল্লি থেকে পাঠানো সিবিআই-এর ইন্সপেক্টরের এই চিঠিতে, ১৫ জনের নামের তালিকা দেওয়া হয়। সিবিআইয়ের তরফে দাবি করা হয়, এরা আফগানিস্তান থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ভারতের কারও সাহায্যে তাঁদের কাছে পৌঁছে গেছে ভারতীয় পাসপোর্ট। এই ১৫ জন নিজেদের নামে অথবা পরিবারের অন্য কারও নামে ভুয়ো জন্ম এবং মৃত্যুর শংসাপত্র তৈরি করিয়েছেন। ৭ জন তৈরি করিয়েছেন ভুয়ো জন্ম শংসাপত্র। বাকি ৮ জন পরিবারের কারও নামে তৈরি করিয়েছে ভুয়ো মৃত্যুর শংসাপত্র। সিবিআইয়ের তরফে মাল পুরসভার কাছে জানতে চাওয়া হয়, এই শংসাপত্রগুলি কি মাল পুরসভা থেকে ইস্যু করা হয়েছে? তালিকায় যাঁদের নাম আছে, তাঁদের নামে কি জন্ম শংসাপত্রগুলি ইস্য়ু করা হয়েছে?
মাল পুরসভার কাছ থেকে সার্টিফিকেটগুলির জন্য করা আবেদনপত্রের কপি চেয়েছিল CBI। কিন্তু ২ সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও, CBI-এর চিঠির জবাব দেয়নি মাল পুরসভা। এরপর ৫ ডিসেম্বর, ফের মাল পুরসভার চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয় CBI. যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় নথি পেশ করতে অনুরোধ করা হয়। আর এ নিয়ে জল্পনার মধ্যেই, মাল পুরসভার উপ পুরপ্রধান উৎপল ভাদুড়ি গোটা বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছেন। মাল পুরসভা সূত্রে খবর, CBI-এর জোড়া চিঠি পাওয়া পরপরই ১৭ ই ডিসেম্বর, মাল থানায় একটি এফআইআর দায়ের করেন মাল পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন সাহা।
যেখানে খোদ পুরসভার চেয়ারম্যানের আতসকাচের তলায় রয়েছেন মাল পুরসভারই কর্মী। সূত্রের দাবি, সরাসরি জন্ম ও মৃত্যুর শংসাপত্র বিভাগের কর্মী প্রসেনজিৎ দত্ত-র নামে অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। পুরসভার চেয়ারম্যানের দাবি, ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে এই বিভাগের বেশ কিছু বেনিয়ম তাঁর নজরে আসে। দেখা যায়, ২০২২ ও ২০২৩ সালে বেআইনিভাবে কিছু বার্থ ও ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছিল। পরে, পুরসভার পোর্টালে তোলা হয়েছে সেই তথ্য। শুধু তাই নয়, পুরসভার চেয়ারম্যানের অভিযোগ, তাঁর ডিজিটাল সই পর্যন্ত জাল করা হয়েছে। স্বপন সাহার দাবি, এই সবটাই হয়েছে তাঁর অজান্তে। এদিকে পুরসভার যে কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই প্রসেনজিৎ দত্তের প্রতিক্রিয়ার জন্য় চেষ্টা করা হলেও, তাঁর মোবাইল ফোন সুইচড অফ।
এদিকে এরইমধ্য়ে পাসপোর্টকাণ্ডের পাণ্ডা সমরেশ বিশ্বাসকে নিয়ে সামনে আসছে আরও চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। সূত্রের দাবি, শুধু জাল ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করে দেওয়াই নয়, বাংলাদেশি নাগরিকদের সীমান্ত পার করিয়ে ভারতে নিয়ে আসত সমরেশের টিম। জাল পাসপোর্ট তৈরির নেটওয়ার্কের মধ্যেও ছিল আলাদা আলদা উইং। বিদেশে যেতে চান এমন বাংলাদেশিদের খোঁজ করার জন্য় এজেন্ট ছিল। আবার জাল পাসপোর্ট তৈরির জন্য ভুয়ো ঠিকানা জোগাড় করার জন্য় পৃথক এজেন্ট ছিল। বাংলাদেশিদের আসল নাম বদলে নতুন নামে জাল আধার ও ভোটার কার্ড তৈরি করার দায়িত্ব আবার অন্য় এজেন্টদের ওপর ছিল। ভুয়ো বার্থ সার্টিফিকেট, স্কুল সার্টিফিকেট ও মার্কশিট তৈরি করে দেওয়ার জন্যও এজেন্ট ছিল সমরেশের। এখানেই শেষ নয়, অবৈধভাবে ভারতে নিয়ে আসা বাংলাদেশিদের সেফ শেল্টারে রাখার দায়িত্বও সমরেশ নিতেন বলে সূত্রের দাবি।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: Rabindra Sarobar: সঙ্কটে মহানগরের ‘ফুসফুস’? রবীন্দ্র সরোবরে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ