সুদীপ চক্রবর্তী, উত্তর দিনাজপুর: সাপ ধরতে ভরসা ইউটিউবের জ্ঞান! আর সেই বিদ্যায় ভর করে সাপ ধরতে গিয়ে বিষধরের কামড় খেতে হল উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের এক তরুণকে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তরুণ এখন বিপন্মুক্ত। প্রশিক্ষণ ছাড়া, বন দফতরের অনুমতি না নিয়ে এভাবে সাপ ধরা অনুচিত। বলছেন পশুপ্রেমী সংগঠনের সদস্যরা।
কথায় বলে, অল্প বদ্যা ভয়ঙ্করী! আর তা যে শুধু কথার কথা নয়, সাহস আর দুঃসাহসের মধ্যে ফারাক যে বিস্তর, মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে তা বেশ বুঝতে পারছেন এই তরুণ!নাম, সৌরভ পণ্ডিত, উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের বাসিন্দা। ইউটিউব দেখে শেখা সাপ ধরার কৌশল বাস্তবে প্রয়োগ করতে গিয়ে হাসপাতালের বিছানায় ঠাঁই হয়েছে তাঁর।
শুক্রবার রাতে, দিদির বাড়িতে কালাচ সাপ ঢুকেছে শুনে, সটান সেখানে পৌঁছে যান রবীন্দ্রপল্লির যুবক। সাপটিকে ধরেও ফেলেন। কিন্তু কালাচকে জারে ভরার সময় সৌরভের মনে হয়, হাতে দাঁত ফুটিয়ে দিয়েছে সে। কোনও ঝুঁকি না নিয়ে সোজা রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে যান তিনি।
সৌরভ বলেন, 'আমি যখন কোটোতে ঢোকাতে গেলাম, তখন মনে হল সাপটা কামড়েছে। কোথাও দাগটাগ বসেনি, যেহেতু কমন ক্রেট, আমি ইউটিউবে দেখেছি এর কোনও দাগটাগ বসে না। আর অন্য সাপ হলে দাগ বসত। আমি কনফার্ম হতে পারতাম। আমার প্রশিক্ষণ নেওয়া নেই। নিজে থেকেই ইউটিউব দেখে দেখে শেখা।'
সাপ কামড়েছে কি না, তা নিয়ে সৌরভের সংশয় থাকলেও, চিকিৎসকদের কোনও সংশয় নেই। রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী সুপার সৌম্যাশিস রায় বলেন, 'গতকাল রাত ১০টা ১৫ মিনিট নাগাদ স্নেকবাইট নিয়ে ভর্তি হয়। বর্তমানে বিপদমুক্ত। মেডিসিন চলছে। খাওয়াদাওয়া নর্মাল। আশা করছি, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবে।'
প্রশিক্ষণ না নিয়ে সাপ ধরতে গিয়ে ছেলে যে ভুল করেছে, তা স্বীকার করেছেন বাবাও। সৌরভের বাবা বলেন, 'ওর একদমই উচিত হয়নি এমন কাজ করতে যাওয়া।' উত্তর দিনাজপুর পিপলস ফর অ্যানিম্যালসের সম্পাদক গৌতম তান্তিয়া বলেন, 'কালকে রাতে কালাচ সাপ কামড়েছে। যন্ত্রণা থাকে না। তলপেটে ব্যথা শুরু হয়। পরে মারা যায়। এভাবে সাপ ধরা একদম অনুচিত। প্রশিক্ষণ ছাড়া কেউ যেন সাপ ধরতে না যান।'
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজ্যে মূলত ৪ ধরনের বিষধর সাপ রয়েছে। গোখরো বা কেউটের মতো সাপের কামড় বুঝতে অসুবিধা হয় না। কামড়ের জায়গায় প্রচণ্ড জ্বালা, যন্ত্রণা, ফুলে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। কিন্তু কালাচ বা কালচিতি বিষ ঢালে অজান্তে। এর কামড় এতোই সূক্ষ্ম যে, কোনও চিহ্ন থাকে না। বোঝাই যায় না, সাপ কামড়েছে।