তুহিন অধিকারী, বাঁকুড়া: আজ মকর সংক্রান্তি (makar sankranti)। সারা পৌষ মাস জুড়ে ঘরের মেয়ে টুসুকে (tusu) গানে গানে আরাধনা (worship) করে এসেছেন রাঢ় বাংলার মানুষ। রীতি মেনে আজ তাঁর বিদায় নেওয়ার দিন। ঘরের মেয়ের বিদায়বেলাতেও উৎসবের (celebration) ধুম প্রাচীন মল্লগড় বিষ্ণুপুরে (bishnupur)। 


আনন্দের ছবি...
রাঢ় বাংলার সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে টুসু। কেউ বলেন টুসু দেবী লক্ষ্মীরই আরেক রূপ। আবার কারও কারও মতে, টুসু আসলে রাঢ়বঙ্গের লৌকিক দেবী। পরিচয় নিয়ে মতভেদ থাকলেও তিনি যে রাঢ়বঙ্গের ঘরের মেয়ে তা নিয়ে দ্বিমত নেই। সারা পৌষ মাস জুড়ে ফুল ও তুষ দিয়ে টুসু খোলা সাজিয়ে গানে গানে তাঁকে আরাধনা করা হয়। পৌষ সংক্রান্তির আগের রাতে হয় টুসুর জাগরণ। চিরাচরিত সেই রীতি মেনে রাতভর এককালের প্রাচীন মল্লগড় বিষ্ণুপুরে রাত ভর টুসুর জাগরণ করে আজ সকাল থেকে চলছে টুসু বিসর্জনের পালা। যমুনাপাড়া-সহ বিষ্ণুপুর শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাতারে কাতারে মানুষ শোভাযাত্রা করে টুসুর চৌদল সাজিয়ে হাজির হচ্ছেন যমুনা বাঁধের পাড়ে। সঙ্গে দোসর টুসু গান আর নাচ। এই যমুনা বাঁধেই টুসুর চৌদল ভাসিয়ে মকর স্নান সারছেন বিষ্ণুপুরের মানুষ। চোখের জলে ঘরের মেয়েকে বিদায় দিয়ে ভারাক্রান্ত মনে আট থেকে আশি সকলেই কামনা করছেন পরের পৌষে আবার এসো মা।

করোনায় মাথায় হাত...
করোনা অতিমারি ধাক্কা দিয়েছিল টুসুর হাটেও। গত বছর পরিস্থিতি এমনই হয় যে পেটের জোগান দিতে বিকল্প রোজগারের রাস্তা খোঁজার কথা ভাবতে হয় ঝাড়গ্রামের টুসু শিল্পীদের। তাঁদের অভিজ্ঞতা, করোনায় বাজারহাট একেবারেই ফাঁকা। রাঢ়বঙ্গের বাকি অংশের মতো ঝাড়গ্রাম তথা জঙ্গলমহলেও টুসু পরব অত্যন্ত জনপ্রিয়। টুসু পুতুল বিক্রির পাশাপাশি দু’দিন ধরে চলে  লাঠিখেলা, পটচিত্রের কর্মশালা। কিন্তু করোনায় গত বার বাজার-হাট বন্ধ ছিল। জমায়েতে লাগাম টানতে জায়গায় জায়গায় বিধিনিষেধ চালু করে প্রশাসন। ফলে কোপ পড়ে টুসু হাটেও। তাতে বেশ চাপ পড়ে টুসু শিল্পীদের। কিন্তু হাটের অন্তত তিন মাস আগে থেকে ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন ব্লকে শিল্পীরা বাড়িতে টুসু তৈরির কাজে হাত দিয়েছিলেন। জঙ্গলমহলের বিভিন্ন হাটে নিয়ে গিয়ে সেগুলি বিক্রি করে দু’পয়সা ঘরে আনার আশায় বুক বাঁধছিলেন তাঁরা। কিন্তু করোনায় বাজার-হাট বন্ধ থাকা। অথৈ জলে পড়েছেন সকলে। ধার-দেনা করে টুসু তৈরিতে হাত দিয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু বিক্রিবাটা নেই যেখানে, ধার শোধ করবেন কী ভাবে, সেই চিন্তাই এখন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সকলকে। পরবে নতুন জামা-কাপড় তোলা ব্যবসায়ীদেরও একই অবস্থা। এবার অবশ্য টুসু বিদায় ঘিরে বাঁকুড়ায় অন্তত যে ছবিটা দেখা গেল তাতে অনেকেই আশায় বুক বেঁধেছেন।


আরও পড়ুন:কুয়াশায় ঢাকা চারদিক, দেরিতে বহু ট্রেন, সমস্যা বিমান চলাচলেও