তুহিন অধিকারী, বিষ্ণুপুর: পুরসভার টেন্ডার দুর্নীতি কাণ্ডের পর এবার সামনে এল প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের স্বেচ্ছাচারিতার ঘটনা।
অভিযোগ, সেই স্বেচ্ছাচারিতার মাসুল এবার দিতে হচ্ছে বিষ্ণুপুর পুরসভাকে। গায়ের জোরে রাজদরবারে পুরসভার দেড় কোটি টাকায় তৈরি একটি পার্ক এবার বিষ্ণুপুর পুরসভাকে তুলে দিতে হচ্ছে রাজ পরিবারের হাতে।
বিষ্ণুপুর পুরসভা সূত্রে জানা গেছে, বিষ্ণুপুর পুরসভার তরফে ২০১৭ সালে বিষ্ণুপুর মল্ল রাজদরবারে একটি পার্ক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়।
রাজদরবারের জোড়বাংলা ও লালজিউ মন্দির সংলগ্ন এলাকায় রাজ পরিবারের হাতে থাকা প্রায় সাড়ে চার একর জমির উপর ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে ওই পার্ক।
পুরসভা সূত্রে জানা যায়, তৎকালীন পুরপ্রধান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশে ওই পার্ক তৈরি করতে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়। রাজ দরবারের ওই জমিতে পার্ক তৈরির শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন রাজ পরিবারের সদস্যরা।
রাজ পরিবারের দাবি, তাঁদের জমির উপর এই পার্ক তৈরি করা হলেও তাঁদের কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। পার্ক তৈরির শুরুতেই রাজ পরিবার আপত্তি জানাতে গেলে কার্যত গায়ের জোরে সেই পার্ক তৈরির কাজ অব্যাহত রাখে পুরসভা।
রাজ পরিবার বিষ্ণুপুর থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে শ্যামাপ্রসাদ থানায় নিজের প্রভাব খাটিয়ে সেই অভিযোগ না নেওয়ার ব্যবস্থা করে বলে অভিযোগ।
এই ঘটনার পরই বিষ্ণুপুরের রাজ পরিবার দ্বারস্থ হয় কলকাতা হাইকোর্টের। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট পার্কের ওই জায়গাটিকে পুনরায় রাজ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বিষ্ণুপুর পুরসভাকে নির্দেশ দেয়।
হাইকোর্টের এই নির্দেশ মিলতেই বিষ্ণুপুর পুরসভার প্রশাসক বোর্ড বৈঠক করে ওই পার্কটিকে রাজ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আর এর ফলেই ফের একবার শ্যামাপ্রসাদের স্বেচ্ছাচারিতার মাসুল বিষ্ণুপুর পুরসভাকে দিতে হল বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
বিষ্ণুপুর পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন অর্চিতা বিদ বলেন, পুরনো বোর্ডে যাঁরা ছিলেন তাঁরা করেছিলেন এটা। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরেই আমাদের কাছে একটা হাইকোর্টের অর্ডার আসে পার্কটি আগের যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়া হোক। না হলে পুরসভা যেন কিনে নেয়। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পার্কটি মালিকের হাতে ফিরিয়ে দেব। ওই জায়গা রাজ পরিবারকে ফিরিয়ে দিলে পার্ক তৈরিতে ব্যয় করা বিষ্ণুপুর পুরসভার দেড় কোটি টাকা জলে চলে যাবে।