প্রসূন চক্রবর্তী, গঙ্গাজলঘাটি (বাঁকুড়া) : ওত পেতে বিপদ ! শিক্ষা গ্রহণ করতে যাওয়ার পথে পদে পদে বিপদ ! কার্যত প্রাণ হাত নিয়েই দেড় কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে স্কুলে পৌঁছতে হয় শতাধিক পড়ুয়াকে। আর সন্তানদের বিপদ-সঙ্কুল পথে স্কুলে পাঠিয়ে চিন্তায় থাকেন অভিভাবকরাও। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনকে জানিয়েও হাল ফেরেনি রাস্তার।


রাস্তা মাত্রা দেড় কিলোমিটারের। কিন্তু সেই পথ পাকা করা তো দূরঅস্ত, একটু মোরাম ফেলে ন্যূনতম যাতায়াত-যোগ্যও করে তোলা হয়নি। আলপথে স্থানে স্থানে জমে রয়েছে হাঁটুসমান কাদা-জল। ঝোপঝাড়ে ঢাকা আলপথে ওত পেতে থাকে বিষধর সাপের আতঙ্ক। কিন্তু, তার থেকেও বড় বালাই লেখাপড়ার চাহিদা। অগত্যা প্রাণ হাতে করেই দৈনন্দিন স্কুলে যাতায়াত করতে বাধ্য হয় তিনটি গ্রামের পড়ুয়ারা। স্কুলে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকরা। চিন্তার শেষ নেই স্কুল কর্তৃপক্ষেরও।


বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটি ব্লকের নূতনগ্রাম, হালাইগড়িয়া, বাগরাকোন্দা গ্রাম। এই তিনটি গ্রামে সব মিলিয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা শতাধিক। স্থানীয় হাই স্কুল বলতে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বিহারজুড়িয়া হাইস্কুল। রাস্তা না থাকায় এই দেড় কিলোমিটার দুর্গম পথই ভরসা ছোট ছোট পড়ুয়াদের কাছে। আলপথের জায়গায় জায়গায় জমে রয়েছে জল কাদা। বর্ষায় এই রাস্তার পুরোটাই ঢাকা থাকে। সারা বছরই হাতে চটি জুতো নিয়ে গ্রাম থেকে স্কুল যেতে হয় পড়ুয়াদের। আলপথের বেশিরভাগটাই ঝোপঝাড়ে ঢাকা থাকে বছরভর। যে ঝোপঝাড়ের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকে মৃত্যুদূত বিষধর সাপ ও পোকা মাকড়। কিন্তু সে পথ মাড়াতে না চাইলে ৬ কিলোমিটার ঘুরপথে যে পৌঁছাতে হবে স্কুলে। অগত্যা দেড় কিলোমিটার দুর্গম আলপথই ভরসা এলাকার পড়ুয়াদের। সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে চূড়ান্ত আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকরা।  যাতায়াতের পথে পড়ুয়াদের বিপদের আশঙ্কায় কাঁটা হয়ে থাকেন স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারাও।


রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে 'পথশ্রী ' প্রকল্পে রাস্তা তৈরি হয়েছে। এই প্রকল্পের সাফল্য তুলে ধরে লাগানো হয়েছে বিজ্ঞাপনের বড় বড় হোর্ডিং। স্থানীয়দের অভিযোগ, পথশ্রী প্রকল্পে পাকা রাস্তা তো দূরের কথা, দুর্গম এই আলপথে সামান্য মোরাম দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেনি প্রশাসন। রাস্তার এমন হাল অজানা নয় প্রশাসনের। বারংবার প্রশাসনকে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু হাল ফেরেনি রাস্তার।


বিজেপির বক্তব্য, পথশ্রী প্রকল্পের বিজ্ঞাপনই সার। রাজ্যের রাস্তার হাল বহু ক্ষেত্রে এমনই। রাজ্যের শাসক দল ও সরকারের মুখের কথা এক আর বাস্তব চিত্র আরেক, এই ঘটনা তারই প্রমাণ। 


তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতি বিরোধীদের দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের দাবি, একদিকে জমির অভাব, অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে কোনো আবেদন জমা না পড়াতেই ওই রাস্তা করা সম্ভব হয়নি। আবেদন জমা পড়লেই বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে।