পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া : চাহিদার তুলনায় জোগান কম। এদিকে আলু বসানোর ভরা মরসুম। এই পরিস্থিতিতে বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়েছে সারের ব্যাপক কালোবাজারি। বাজারে যখন এমন পরিস্থিতি, তখন গ্রাম পঞ্চায়েতের গুদামে গত ৪ বছর ধরে পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে সরকারিভাবে সরবরাহ করা শতাধিক বস্তা জৈব সার। বাঁকুড়ার বড়জোড়া ব্লকের বৃন্দাবনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা। সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি জানার পর ঘটনা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে বাঁকুড়া জেলা পরিষদ। 


বাঁকুড়া জেলার বড়জোড়া ব্লকের বৃন্দাবনপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রচুর পরিমাণে আলু চাষ হয়। প্রায় প্রতি বছরই এই সময়টায় সারের কালোবাজারির মুখে পড়তে হয় এলাকার চাষিদের। কালোবাজারে চড়া দরে রাসায়নিক ও জৈব সার কিনে তবেই আলু বসানোর কাজ করতে পারেন কৃষকরা। এবছরও তার অন্যথা হয়নি। আলু বসানোর এই মরসুমে এক বস্তা সার জোগাড় করতে যখন এলাকার চাষিদের ঘাম ছুটছে, সেই সময় পঞ্চায়েতের গুদামে বছরের পর বছর ধরে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে শতাধিক বস্তা জৈব সার। সরকারিভাবে সরবরাহ করা ওই সার চাষিদের মধ্যে বিতরণের বারবার আবেদন জানিয়েছেন স্থানীয় চাষিরা। কিন্তু, চাষিদের সেই আবেদনে কর্ণপাত না করার অভিযোগ উঠেছে গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। 


চাষিদের অভিযোগ, গ্রাম পঞ্চায়েতের আগের বোর্ডের হয়তো ইচ্ছা ছিল ওই বিপুল পরিমাণ সার জমিয়ে রেখে পরে তা পাচার করার। কিন্তু, পঞ্চায়েতে বোর্ড বদল হয়ে যাওয়ায় তা আর সম্ভব হয়নি। 


বর্তমানে বিজেপি পরিচালিত পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের দাবি, নতুন বোর্ড গঠনের পর ওই সার কী করা হবে তা নিয়ে বারেবারে প্রশাসনের কাছে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু প্রশাসন সে ব্যাপারে কিছু জানাতে পারেনি। এদিকে ওই সার একশো দিনের কাজের প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ থাকায় কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। বাঁকুড়া জেলা পরিষদ গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছে। 


প্রসঙ্গত, সম্প্রতি হিমঘরে (Cold Storage) আলু রাখার সময়সীমা বাড়িয়েছে রাজ্য। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে ওই সময়সীমা। ভিন রাজ্যে চাহিদা কম থাকায় রাজ্যের ৪৭০টি হিমঘরে এবার কয়েক লক্ষ টন আলু পড়ে রয়েছে বলে পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা যায়। বিভিন্ন কারণে এবার আলু চাষের মরসুম দেরিতে শুরু হয়েছে। ফলে, নতুন আলু উঠতে এখনও কিছুটা সময় লাগবে। সেজন্য হিমঘরে আলু সংরক্ষণের সময়সীমা বাড়ানো ছাড়া সরকারের হাতে বিকল্প উপায় ছিল না বলে চাষি থেকে সংরক্ষণকারীরা মনে করছেন। বাড়তি এক মাসের জন্যে সরকারিভাবে ভাড়া (দক্ষিণবঙ্গের জন্যে কুইন্টাল প্রতি ১৮.৬৬ টাকা আর উত্তরবঙ্গের জন্যে ১৯.১১ টাকা) ধার্য করা হয়েছে।