পূর্ণেন্দু সিংহ, ছাতনা: দলের সাংসদ সহ জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে পদ ছাড়লেন বিজেপির ছাতনা এক নম্বর মন্ডল সভাপতি সহ ১৪০ জন পদাধিকারী। আজ সকালে বাঁকুড়ার ছাতনা ব্লকের লোহাগড় মোড়ে ওই মন্ডলের বিজেপি নেতৃত্ব বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি ১৪০ জন পদাধিকারী পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন।
গত ২৫ ডিসেম্বর বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলায় জেলা সভাপতি পদে রদবদল হয়। পরে নতুন জেলা কমিটি ঘোষণা করে বিজেপি নেতৃত্ব। দলের নবগঠিত জেলা কমিটি, জেলা সভাপতি সহ দলীয় সাংসদ ও বিধায়কের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে তৈরি হয় নিচুতলার কর্মীদের ক্ষোভ। আজ তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে। বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিলেন বিজেপিরই নেতাকর্মীরা। তাও আবার প্রকাশ্যে! ছাতনার বিজেপি বিধায়ক সত্যনারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিতে দেখা গেল বিজেপি নেতা-কর্মীদের। সাংগঠনিক রদবদল ঘিরে ২৫ ডিসেম্বর থেকে বাঁকুড়া বিজেপিতে যে বিদ্রোহ শুরু হয়েছে, তা যেন তুঙ্গে পৌঁছল আজ। দলীয় সাংসদের বিরুদ্ধে দলকে বিক্রি করে দেওয়া, বিধায়কের বিরুদ্ধে কাজে নিষ্ক্রিয়তা এবং নতুন জেলা কমিটির বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট রাজনীতির অভিযোগ তুলে ছাতনার লোহাগড়ে প্রকাশ্যে আক্রমণ শানালেন একাধিক বিজেপি নেতা ও কর্মী।
নতুন জেলা কমিটির তত্ত্বাবধানে কাজ করবেন না জানিয়ে ছাতনা এক নম্বর মণ্ডল সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বিজেপি নেতা জীবন মণ্ডল। তাঁর সঙ্গে থাকা আরও অনেককে এদিন দলীয় প্যাডে সই করে ইস্তফা দিতে দেখা যায়। বিজেপি সূত্রে দাবি, শক্তি প্রমুখ, বুথ সভাপতি, মণ্ডল নেতৃত্ব মিলিয়ে ১৪০ জন এদিন পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন।
ক্ষোভ উগরে দিয়ে জীবন মণ্ডল বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বাঁকুড়ার সাংসদ তাঁর নার্সিংহোম থেকে দলটা চালানোর চেষ্টা করছেন। মনে হয় দলটাকে বিক্রি করে দিয়েছেন। ছাতনার বিধায়কের জনবিরোধী কাজের জন্য পদত্যাগ করলাম। নতুন জেলা কমিটি মানছি না। নতুন কমিটি এদেরই অঙ্গুলি হেলনে কথা বলবে।’
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। ছাতনার বিজেপি বিধায়কের বক্তব্য, কে বা কারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তা তাঁর জানা নেই। যা বলার দলের জেলা সভাপতি বলবেন।
সম্প্রতি বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি পদে সুনীল রুদ্র মণ্ডলকে বসানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধদের রোষ ঠিকরে বেরোতেই কড়া বার্তা দিয়েছেন নতুন সভাপতি। তাঁর দাবি, ‘ছাতনা মণ্ডলের সভাপতি আগেই শো-কজ হয়েছেন দলবিরোধী কাজের জন্য। আগের সভাপতিই শো-কজ করেছিলেন। কয়েকদিন আগে ফেসবুক পোস্টের জন্য ওঁকে আবার শোকজ করা হয়েছে। উনি ভিত্তিহীন কথা বলছেন। দলবিরোধী কাজ বরদাস্ত করবে না বিজেপি। যাঁদের দল ছাড়ার কথা বলছেন, তাঁরা কেউ দলের পদাধিকারী নন।’
বাঁকুড়া জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ও তৃণমূল নেতা শিবাজি বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে। তাই কেউ দলে থাকতে চাইছে না। সবাই বেরিয়ে আসছে। সাংসদকে দেখা যায় না। বিধায়কের নামে নিখোঁজ কমপ্লেন করতে হয়েছে। কেউ আসতে চাইলে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলব।’
২০২১-এর বিধানসভা ভোটে তৃণমূল ঝড়ের মধ্যেও বাঁকুড়ায় ভাল ফল করেছে বিজেপি। সামনেই পুরভোট। তার আগে জেলা বিজেপি নেতৃত্ব কীভাবে এই বিক্ষোভ সামাল দেয়, তা নিঃসন্দেহে বড় চ্যালেঞ্জ।