পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া: ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা অনর্থক। কিন্তু সংসারের হাল ফেরাতে গিয়ে, অশরীরির হাতে লক্ষ লক্ষ টাকা খোয়ানো! আজগুবি গল্প নয়, এই বাংলায় এবার এমনই কাণ্ড ঘটল। একমাসের বেশি সময় ধরে স্বপ্ন দেখিয়ে, এক অশরীরি জিন তাঁর কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করলেন এক ব্যক্তি। বিষয়টি সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। (Bankura Fraudster Jinn)


বাঁকুড়ার ওন্দা ব্লকের শ্যামনগর গ্রামের আমিনুদ্দিন মণ্ডল। পেশায় রাজমিস্ত্রি তিনি। বাঁকুড়া সাইবার ক্রাইম থানার দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, মাস খানেক ধরে ফোনে এক অশরীরি জিনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল তাঁর। তাঁকে সাতঘড়া মোহর পাইয়ে দেবে বলে কথা দিয়েছিল ওই জিন। কিন্তু সেই কথা তো রাখেইনি সে, উপরন্তু তাঁর কষ্টার্জিত তিন লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তবে সব শুনে যা বোঝা গিয়েছে, তা হল, কোনও অশরীরি জিন  নয়, সাইবার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নিজের সঞ্চয় খুইয়েছেন তিনি। (Bankura News)


আমিনুদ্দিন এমনিতে খেটেখুটে যা রোজগার করেন, তা দিয়ে সংসার চলে যায় মোটামুটি। কিন্তু যা রয়েছে, তার চেয়ে ভাল ভাবে বাঁচার স্বপ্ন কার না থাকে! মনে মনে সেই বাসনা ছিল আমিনুদ্দিনের। মাসখানেক আগে আপনা হতেই নাকি সেই সুযোগ নাকি পেয়ে যান তিনি। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, অক্টোবরের শেষ দিকে গভীর রাতে একটি অজানা নম্বর থেকে ফোন আসে তাঁর কাছে। ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তি নিজেকে অশরীরী জিন হিসেবে পরিচয় দিয়ে জানান, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার একটি জায়গায় মণিমানিক্য, হিরে, জহরত এবং সোনাদানা ভর্তি সাত ঘড়া ধন রাখা আছে। ৩ হাজার ৩৬৫ জিন সেই ধনসম্পদ পাহারা দিচ্ছে।


আরও পড়ুন: নদিয়ায় চাঁদাকাণ্ডে চিকিৎসককে মারধরে গুণতে হল মাশুল, গ্রেফতার প্রধান অভিযুক্ত


আমিনুদ্দিনের দাবি, ফোনে ওই জিন তাঁকে জানান, যেখানে ধন-সম্পদ মজুত রয়েছে, ওই এলাকা অপবিত্র হয়ে গিয়েছে। তাই সেই সম্পদ তুলে দিতে হবে কোনও ধর্মপ্রাণ মানুষের হাতে। সেই জন্য আমিনুদ্দিনকে নির্বাচন করা হয়েছে। এক দিন নয়, প্রায়ই মাঝ রাতে ওই ফোন আসতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত ওপারের ব্যক্তি জিন বলে বিশ্বাসও জন্মায় আমিনুদ্দিনের। নির্দিষ্ট দিনে সেই ধনসম্পদ আমিনুদ্দিনের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানায় ওই জিন।  কিন্তু শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসে জানায়, আমিনুদ্দিনের বাস্তু দোষ থাকায় সম্পদ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।


তবে সেখানেই শেষ নয়, বরং বাস্তুদোষ কাটাতে আমিনুদ্দিনকে ফোনেই শলা-পরামর্শ দিতে শুরু করে ওই জিন। । বিভিন্ন ধর্মীয় আচার পালনের জন্য তাঁর কাছ থেকে ধাপে ধারে অনলাইন মাধ্যমে ৩ লক্ষ ৭৬ হাজার ৫০০ টাকা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ। তার পরও সাতঘড়া মোহর আমিনুদ্দিনের বাড়িতে এসে পৌঁছয়নি। তাতে বাড়ির লোকজন, নিকটজনকে বিষয়টি জানান আমিনুদ্দিন। তাতেই মাথায় হাত পড়ে পরিচিতদের। তাঁরাই বাঁকুড়া সাইবার থানায় পাঠান আমিনুদ্দিনকে। লোভ এবং অন্ধ বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে কী সর্বনাশ করেছেন, তা বুঝতে পেরে কেঁদেকেটে কিনারা করতে পারছেন না। অভিযুক্ত জিন তথা অপরাধীকে খুঁজতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।