আমদাবাদ: রাত পোহালেই বিশ্বকাপের (ODI World Cup Final) ফাইনাল। দেড় মাস ধরে চলা বাইশ গজের বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি। মুখোমুখি ভারত ও অস্ট্রেলিয়া (IND vs AUS)। এক দলের সামনে ১২ বছর পর ফের ঘরের মাঠে বিশ্বজয়ের সুযোগ। অন্য দলের সামনে হেক্সা করার হাতছানি। কেউ কেউ আবার ফাইনাল ম্যাচের গায়ে জড়িয়ে দিচ্ছেন প্রতিশোধের প্রলেপ। বলছেন, অস্ট্রেলিয়াকে ফাইনালে হারিয়ে কাপ জয় মানে শুধু ক্রিকেটীয় শ্রেষ্ঠত্বের যুদ্ধে বিজয়ী তকমা ছিনিয়ে নেওয়াই নয়, ২০ বছর পুরনো শাপমোচনের মঞ্চও। ২০০৩ সালে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন টিম ইন্ডিয়াকে ফাইনালে নাস্তানাবুদ করে ট্রফি জিতেছিল রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া। এবার ভারতের সামনেও তাই 'মওকা মওকা' বাজিয়ে দেওয়া হচ্ছে।


এই দেড় মাসে ক্রিকেট বিশ্বও কত বদলে গিয়েছে। বিরাট কোহলি ওয়ান ডে ক্রিকেটে সেঞ্চুরির হাফসেঞ্চুরি করে ভেঙে দিয়েছেন সচিন তেন্ডুলকরের কীর্তি। বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরির নজির গড়েছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাড-ম্যাক্সের ১২৮ বলে অপরাজিত ২০১ রানের ইনিংসকে তো অনেকে ওয়ান ডে ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা বলে চিহ্নিত করেছেন। নিউজ়িল্যান্ডের ফের নক আউট থেকে বিদায়। পাকিস্তানের গ্রুপ পর্বেই বিপর্যয় আর সে দেশের ক্রিকেটে খোলনলচে বদলে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু। শাকিব আল হাসানের বাংলাদেশের হাত ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম টাইমড আউটের দৃষ্টান্ত। সরকারি হস্তক্ষেপের জন্য শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটকে আইসিসি-র নির্বাসন। আফগানিস্তানের উত্থান। সব মিলিয়ে জমজমাট থেকেছে ক্রিকেট বিশ্ব।


এবার টুর্নামেন্টের নাটকীয় পরিসমাপ্তির অপেক্ষায় ক্রিকেটপ্রেমীরা। একটা ব্যাপারে সকলে একমত যে, ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে টুর্নামেন্টের সেরা দুই দলই। একদিকে ভারত টানা ১০ ম্যাচ জিতে, অপরাজিত থেকে ফাইনালে। অন্যদিকে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে টানা আট ম্যাচ জিতে চূড়ান্ত যুদ্ধে নামার সুযোগ অস্ট্রেলিয়ার। ফেভারিট তকমা পাচ্ছে ভারতই। পাবে নাই বা কেন? চলতি বিশ্বকাপে প্রথমে ব্যাট করলে ভারত গড়ে ১৭৫ রানে জিতেছে ম্যাচ। আর রান তাড়া করলে গড়ে ৬৪.৪ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতেছেন রোহিত শর্মারা। নিজেদের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে একপেশেভাবে হারিয়েছিল ভারত। ফলে আমদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে রবিবার দুপুরে যে কাপ জয়ের প্রধান দাবিদার হিসাবেই টস করতে নামবেন রোহিত শর্মা, বলার অপেক্ষা রাখে না।


আর সেটাই না শাপে বর হয় অস্ট্রেলিয়ার কাছে, আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। বিশ্বকাপের ঠিক আগে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের কাছে সিরিজ হেরেছিলেন অজ়িরা। বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ৯১/৭ হয়ে গিয়েছিলেন। ম্যাক্সওয়েলের সেই অবিশ্বাস্য ইনিংস না থাকলে হয়তো সেই ম্য়াচেই বেইজ্জত হতে হতো অস্ট্রেলিয়াকে। ফাইনালে প্যাট কামিন্সরা কালো ঘোড়া হিসাবেই নামবেন। চাপমুক্ত হয়ে মাঠে নামা না আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়ায় অজ়ি শিবিরের কাছে।


তবে নির্লিপ্ত থাকার চেষ্টা করছেন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। শনিবার রোহিত বলেছেন, 'আমরা জানি কী পরিমাণ প্রত্যাশা রয়েছে। চাপ, সমালোচনা সব কিছু নিয়েই ওয়াকিবহাল। তবে সেটা আজ তৈরি হয়নি প্রথম ম্যাচ থেকেই রয়েছে। আমরা ড্রেসিংরুমের পরিবেশ শান্ত, সংযত রাখার চেষ্টা করে গিয়েছি। এমনকী মাঠে চাপের মুখে পড়লেও শান্ত থাকার চেষ্টা করেছি। চাপ অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করেছি।' ঝড়ের আগের নিস্তব্ধতা?


গোটা বিশ্বকাপে ভারতীয় দল গর্ব করার মতো একাধিক মুহূর্ত তৈরি করেছে। প্রতিপক্ষকে একবার অল আউট করেছে ৮৩ রানে, আর একবার ৫৫-তে। পাঁচ ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে তিনবার সাড়ে তিনশোর ওপর রান তুলেছে। এক ম্যাচে তুলেছে ৩২৬/৫। ফিল্ডিংয়ে নিশ্ছিদ্র। টপ অর্ডার ব্যাটিংয়ে পাঁচজনের মধ্যে চারজন চলতি বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি পেয়েছেন। শুভমন গিল সেঞ্চুরি না পেলেও ব্যাটিং গড় রেখেছেন ৫০!


সঙ্গে রয়েছে জনতা জনার্দনের সমর্থন। রবিবার আমদাবাদে এক লক্ষ ৩২ হাজার মানুষ গলা ফাটাবেন রোহিত, বিরাট কোহলিদের জন্য। তবে অস্ট্রেলিয়া যে প্রতিপক্ষ হিসাবে বিপজ্জনক, তা ভালই জানে টিম ইন্ডিয়া। প্রতিপক্ষের জন্য বিপুল জনসমর্থনও যাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। কামিন্স তো সাফ বলে দিয়েছেন, 'এক তরফা সমর্থন পাবে ভারত। তবে কানায় কানায় ভরা গ্যালারিকে চুপ করিয়ে দেওয়ার মতো তৃপ্তি আর কিছুতেই নেই।' সে যতই ডেভিড ওয়ার্নার পুষ্পা দ্য রাইজিং সিনেমার জনপ্রিয় গান শ্রীবল্লির তালে নেচে মাঠ মাতান না কেন। বা ম্যাক্সওয়েল আইপিএল সতীর্থ কোহলিকে দেখে যতই আলিঙ্গন করুন না কেন, তাঁরা যে পেশাদারিত্বের বর্ম গায়ে চাপিয়ে মাঠে নামবেন, আর সামান্যতম সুযোগেও ভারতকে চুরমার করতে চাইবেন, ভালমতোই জানেন টিম ইন্ডিয়ার ক্রিকরেটারেরাও। রবিবার অস্ট্রেলিয়ার প্রথম একাদশের পাঁচজন ২০১৫ সালে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য ছিলেন। তাই বড় মঞ্চে কীভাবে খেলতে হয়, সেই অভিজ্ঞতা রয়েছে।


ফাইনালের উইকেট নিয়েও চর্চা চলছে। পিচে হেভি রোল করা হয়েছে। যে উইকেটে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হয়েছিল, সেই বাইশ গজেই রবিবারের মহারণ। পরের দিকে স্পিনাররা সাহায্য় পেতে পারেন। আমদাবাদ বিমানবন্দর থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, শপিং মল থেকে শুরু করে বাজার, রোহিতদের টিমহোটেল শুরু করে স্টেডিয়ামের পথ, একটাই প্রার্থনা। একটাই রিংটোন। কাপ দাও রোহিত... সবরমতীর তীরে ফেরাও ১২ বছর আগের আরব সাগরের পাড়ের সুখস্মৃতি...


আরও পড়ুন: IND vs AUS Exclusive: শামির সঙ্গে ফুচকার পুরো দোকান তুলে এনেছিলাম হোটেলে! বিশ্বের যে কোনও দল ওকে লুফে নেবে


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন


https://t.me/abpanandaofficial


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।