তুহিন অধিকারী, বাঁকুড়া : লকার খুলতেই বেরিয়ে এলো ভরি ভরি সোনার অলঙ্কার, সোনার বিস্কুট এবং সোনার বাট। সবমিলিয়ে পাওয়া গিয়েছে প্রায় ৩ কেজি সোনা। বিষ্ণুপুর পুরসভার টেন্ডার দুর্নীতিকান্ডে গ্রেফতার হওয়া শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ই (Shyamaprasad Mukherjee) তাঁর সমস্ত সোনা ঘনিষ্ট রামশঙ্কর মোহান্তি ওরফে খোকনের লকারে রেখেছিলেন। জেরার মুখে এমনটাই দাবি রামশঙ্করের। বিষ্ণুপুর পুরসভার টেন্ডার দুর্নীতিকাণ্ডে প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের ঘটনায় উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য।


পুলিশসূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভার টেন্ডার দুর্নীতিকান্ডে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পরই তাঁর ঘনিষ্ট রামশঙ্কর মোহান্তি শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে ব্যাগে করে সোনা, গয়না এবং সম্পত্তি বিষ্ণপুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে নিজের লকারে জমা করেন। জেরায় এমন তথ্য নিজেই দিয়েছেন তিনি। আগেই তিনি জানিয়েছিলেন যে, তাঁর লকারে প্রাক্তন মন্ত্রী প্রচুর পরিমাণে সোনা রেখেছেন। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কত পরিমাণ সোনা রামশঙ্করের লকারে রেখেছেন, তা জানতেই এদিন দুপুরে বিষ্ণুপুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের একটি শাখায় আসেন তদন্তকারীরা। পূলিশসূত্রে জানা গিয়েছে, রামশঙ্করের লকার খুলতেই বিপুল পরিমাণে সোনা দেখতে পান তদন্তকারীরা। সোনা যাচাই করার বিশেষজ্ঞকে নিয়ে এসে ওজন এবং সোনা যাচাইও করা হয়। গোটা ঘটনাটা পুলিশের পক্ষ থেকে ভিডিওগ্রাফিও করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।


ঘটনা প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, বিপুল পরিমাণে সোনা উদ্ধারের পর তা বাজেয়াপ্ত করে লকার সিল করে দেয় পুলিশ। ইতিমধ্যেই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামে ও বেনামে ২২টি জমির হদিশ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তার সঙ্গে একাধিক ব্যাঙ্ক এবং পোস্ট অফিসে তাঁর নিজের নামে এবং পরিবারের নামে কোটি কোটি টাকা মজুত রয়েছে বলেও জানতে পেরেছে পুলিশ। রামশঙ্করের লকারে রাখা সোনার পরিমাণ তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন। পাশাপাশি রামশঙ্করের মতো আরও কারও কারও লকারে শ্যামাপ্রসাদের সম্পত্তি রাখা রয়েছে কিনা, তারও সন্ধান চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা।


প্রসঙ্গত, বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন বিধায়ক। বিষ্ণুপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যানও ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তাঁর বিরুদ্ধে পুরসভার টেন্ডার সংক্রান্ত আর্থিক তছরুপের অভিযোগ রয়েছে। তার ভিত্তিতেই প্রাক্তন মন্ত্রীকে গ্রেফতার করে বাঁকুড়া জেলা পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে ৪০৬, ৪০৯ এবং ৪২০ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।