পূর্ণেন্দু সিংহ,বাঁকুড়া : কুড়ি থেকে পঁচিশ বছর পেটের ভিতর সাড়ে সাতশো গ্রাম ওজনের বিরল মাংসপিণ্ড নিয়ে ঘুরছিলেন পুরুলিয়ার শ্রমিক। জটিল অস্ত্রোপচারে সাফল্য বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে।
মাঝে মধ্যে পেট ব্যাথা হত । সমস্যা হত মল-মূত্র ত্যাগেরও । গ্যাস, অম্বল লেগেই থাকত । মাঝেমধ্যে মনে হত পেটের মধ্যে বড়সড় কিছু রয়েছে । গত কুড়ি থেকে পঁচিশ বছর ধরে এভাবেই কাটছিল পুরুলিয়ার শ্রমিক মদন রজকের । চিকিৎসা যে একেবারে হয়নি তাও নয় । পুরুলিয়া , জামসেদপুর ও বর্ধমানে চিকিৎসা করালেও কাজের কাজ কোনও কিছুতেই হয়নি । অবশেষে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে জটিল অস্ত্রোপচার করে চিকিৎসকরা বের করে আনেন প্রায় সাড়ে সাতশো গ্রাম ওজনের টিউমার । আপাতত সুস্থ রোগী ।
ডাক্তারি পরিভাষায় এর নাম পেরিটোনিয়াল জায়েন্ট লুজ বডি । পেটের গহ্বরের মধ্যে নিজের ইচ্ছেমতো অনায়াসে ঘুরে বেড়ানো একটি মাংসপিণ্ড । কয়েক হাজার মানুষের মধ্যে এক’জন দু’জনের শরীরে হঠাৎ তৈরি হওয়া মাংসপিণ্ড কখনো কখনো মারাত্মক আকার নেয়। মল-মূত্র আটকে দিয়ে এই মাংসপিণ্ড কখনও কখনও হয়ে ওঠে রোগীর মৃত্যুর কারণও ।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বছর কুড়ি পঁচিশ আগে পুরুলিয়া জেলার মানবাজার ব্লকের জবলা গ্রামের বাসিন্দা মদন রজকের পেটের গহ্বরের মধ্যেও এমনই একটি মাংসপিণ্ড তৈরি হয় । প্রথম প্রথম পেট ব্যাথার উপসর্গ দেখা দিত । বিষয়টিতে তেমন আমল না দিতেন না পেশায় দিনমজুর মদন রজক । স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে দু একবার চিকিৎসা করালেও তাঁরাও তেমন আমল দেননি । বছর পাঁচেক আগে থেকে মদন রজকের শরীরে তৈরি হতে শুরু করে নিত্যনতুন সমস্যা । মল ,মূত্র অনিয়মিত হয়ে পড়ার পাশাপাশি গ্যাস, অম্বলে লাগাতার ভুগতেন মদন রজক । প্রথমে পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতাল ও পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার জন্য ছুটে যান মদন রজক । একসময় পার্শ্ববর্তী ঝাড়খন্ডের জামশেদপুরেও চিকিৎসা করিয়েছিলেন । কিন্তু অসুখ সারেনি ।
সম্প্রতি বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের আউটডোরে চিকিৎসার জন্য আসেন তিনি । চিকিৎসকরা বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেন মদন রজকের পেটের গহ্বরের মধ্যে রয়েছে পেরিটোনিয়াল লুজ বডি । তার আকারও বেশ বড় । এরপরই ওই রোগীর পেট কেটে ওই মাংসপিণ্ড বের করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । সম্প্রতি বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের সার্জিক্যাল বিভাগের চিকিৎসক শিবশঙ্কর কুইরির নেতৃত্বে দশ জনের একটি টিম মদন রজকের শরীরে অস্ত্রোপচার করে বের করে আনেন প্রায় সাড়ে সাতশো গ্রাম ওজোনের এই মাংসপিণ্ড । মাংসপিণ্ডর আকার দেখে রীতিমত হতবাক চিকিৎসক মহল । বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি এই ধরনের বড় মাংসপিণ্ড পেটের গহ্বরের মধ্যে তৈরি হওয়া যেমন বিরল ঘটনা তেমনই এই অস্ত্রোপচারও যথেষ্ট জটিল । হাসপাতালের পরিকাঠামোগত উন্নতি ও চিকিৎসকদের চেষ্টার ফলেই এই ধরনের অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে বলে দাবি বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের । এতদিন ধরে চিকিৎসার পরে অবশেষে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠায় খুশি রোগীর পরিবারও ।