পূর্ণেন্দু সিংহ, শুভেন্দু ভট্টাচার্য, সুমন ঘরাই, বাঁকুড়া: বছর পেরোলেই ছাব্বিশের ভোট। আর তার আগেই জেলায় জেলায় শাসক নেতার খুনের খবর প্রকাশ্যে আসছে। দেড়মাসে তৃণমূলের ১০ জন নেতা-কর্মী  খুন হয়েছেন। তবে কী কারণে খুন করা হয়েছে ? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার উত্তর খোঁজার অপেক্ষায় জারি রয়েছে তদন্ত। ঠিক এমনই সময়, সোনামুখীতে কী কারণে খুন তৃণমূল নেতা? বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন নিহত তৃণমূল নেতার বোন। তিনি বলেন,'আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান প্রকল্পে ১০ লক্ষ টাকা দিচ্ছে রাজ্য সরকার। টাকা হাতে আসার আগে এলাকার রাশ কার হাতে থাকবে, তাই নিয়ে বিবাদ', সেই বিবাদের জেরেই খুন, বিস্ফোরক নিহত তৃণমূল নেতার বোন।

আরও পড়ুন, কোচবিহারে TMC নেতা 'খুনে অধরা' , CBI তদন্ত দাবি করল খোদ নিহত শাসক নেতার পরিবার

বাঁকুড়ার সোনামুখীতে নিহত সিকন্দর খান, তৃণমূলের বুথ আহ্বায়ক ছিলেন। সোমবার রাত বাজার থেকে মোটর বাইকে একাই ফিরছিলেন সিকন্দর। অভিযোগ, নির্জন রাস্তায় DVC ক্যানালের পাড়ে তাঁর ওপর হামলা হয়। তৃণমূল নেতাকে লক্ষ্য করে পিছন থেকে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। তাঁর মাথায় ও পিঠে গুলি লাগে। নিহত তৃণমূল নেতার স্ত্রী আমিনা বিবি বলেন,প্রশাসন দেখতে পাচ্ছে না যে, কীভাবে গুলি, কোথায় পাচ্ছে, কোথা থেকে মারছে? গত দেড় মাসে একাধিক তৃণমূল নেতা কর্মী খুনে, তৃণমূলেরই একাংশ গ্রেফতার হয়েছে।বাঁকুড়ায় তৃণমূল নেতার খুনের পিছনেও গোষ্ঠী কোন্দলের জল্পনা উস্কে গেছে, খোদ পরিবারের সদস্যদের বক্তব্যেই।

 রূপসানা বিবি, নিহত তৃণমূল নেতার বোন বলেন, (অভিযুক্ত) TMC ছিল, সভাপতি ছিল। সভাপতি থেকে ও সবকিছু লুটে খেয়ে নিয়েছিল বলে ওকে বরখাস্ত করে দিল (তৃণমূল কংগ্রেস)। আমার দাদার (সিকন্দর খান) জায়গাটা বাগাতে চাইছে। এখন ১০ লক্ষ টাকা এসেছে। ও (নাসিম শেখ) চাইছে একে (সিকন্দর খান) সরিয়ে দিলে আমি টাকাটা পাব, গ্রামে  দখলবাজিটা চালাতে পারব।' ঘটনার পর থেকে বেপাত্তা মূল অভিযুক্ত নাসিম শেখ। অভিযুক্তের পরিবার দাবি করছে,বরাবরই তৃণমূল করতেন তিনি (অভিযুক্ত নাসিম শেখ) । কিন্তু নিহত তৃণমূল নেতার স্ত্রীর আবার উল্টো দাবি। নিহত তৃণমূল নেতার স্ত্রী আমিনা বিবি বলন,আমার স্বামী যখন থেকে তৃণমূলে দাঁড়িয়েছিল তখন থেকে ও (অভিযুক্ত) পিছনে লেগেছিল। সে বিজেপির লোক। মূল অভিযুক্তের বউদি নুরুল আলা বিবি বলেন, ওরা (নিহতের পরিবার) বলছে না বিজেপি...(নাসিম) বিজেপি কোনওদিনই করেনি। গ্রামটা ঘুরে দেখে নিক। আগে নাসিম (তৃণমূল) করেছে, তারপর ও (সিকন্দর খান) করেছে।

বাঁকুড়ার আগে, শনিবার কোচবিহারের ভরা বাজারে গুলি করে খুন করা হয়, যুব তৃণমূল নেতা অমর রায়কে। কিন্তু তারপর ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এই প্রেক্ষাপটে CBI তদন্তের কথা শোনা গেল নিহতের মায়ের মুখে। যিনি নিজে তৃণমূল পরিচালিত ডাওয়াগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। অর্থাৎ খোদ তৃণমূল নেত্রী সিবিআই তদন্ত চাইছেন!নিহত তৃণমূল নেতার মা ও পঞ্চায়েত প্রধান  কুন্তলা রায় বলেন , 'এটা পুলিশের ব্যর্থতা। আমি মনে করব এটা পুলিশের ব্যর্থতা। পুলিশ ইচ্ছা করলে সবই করতে পারে কিন্তু কেন যে এরা করছে না, কী ব্যাপার এটা আমি বুঝতে পারছি না।  CBI তদন্ত আমাদের অবশ্যই দরকার হবে।'এই আবহেই সূত্রের খবর মঙ্গলবার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, এত খুন হচ্ছে কী করে? থানা কী করছে? দায়িত্ব নিয়ে বসে থাকলাম, কাজ করলাম না, সেটা যেন না হয়। এটা হবে না।