তুহিন অধিকারী, বাঁকুড়া: কখনও মুর্শিদাবাদ, কখনও পূর্ব মেদিনীপুর, কখনও আবার বাঁকুড়া। পঞ্চায়েত ভোটের আগে বারবার দলীয় কমিটি তৈরি নিয়ে প্রকাশ্যে আসছে তৃণমূলের অন্দরের অসন্তোষ। এবার বাঁকুড়ারই বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলাতেও টাউন কমিটি তৈরি করা নিয়ে প্রকাশ্যে এল ক্ষোভের ছবিটা। নতুন তৈরি টাউন কমিটি নিয়ে শাসকের ঘরে আদি-নব্য দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এল। ক্ষোভের জেরে কমিটি তৈরি স্থগিত রাখার কথা জানিয়েছে জেলা নেতৃত্ব। 


সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা কমিটি ঘোষণার সময়, বেনজিরভাবে সাংবাদিক বৈঠক ছেড়েছিলেন জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্য়ান আবু তাহের খান। বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা কমিটি ঘোষণার পরেও প্রকাশ্যে আসে তৃণমূলের অন্দরের ক্ষোভ। দলের জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে কমিটি গঠনে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তোলেন তালডাংরার তৃণমূল বিধায়ক। সেই বাঁকুড়ারই বিষ্ণুপুরে এবার টাউন কমিটি গঠন ঘিরে শাসকদলের অন্দরে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। প্রকট হয়েছে আদি-নব্য়ের দ্বন্দ্ব। ক্ষোভের আঁচ পেয়ে নতুন কমিটি আপাতত স্থগিত রেখেছে জেলা নেতৃত্ব। 


কমিটি তৈরি নিয়ে দ্বন্দ্ব:
সোমবারই ঘোষণা করা হয় তৃণমূলের বিষ্ণুপুর টাউন কমিটি। তারপর ক্রমশ পারদ চড়ছে ক্ষোভের। এখানেও এসেছে আদি-নব্য দ্বন্দ্ব। তৃণমূল কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, বিজেপির টিকিটে জিতে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিধায়ক তন্ময় ঘোষের অনুগামীদের দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত বিধানসভা ভোটে বিষ্ণুপুরে বিজেপির টিকিটে জেতেন তন্ময় ঘোষ। তার কয়েকদিন পরেই তৃণমূলে ফেরেন তিনি। তৃণমূল কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, বিধায়ক যখন বিজেপিতে ছিলেন। তখন তাঁর হয়ে যাঁরা কাজ করেছিলেন, তাঁরা পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগ দেননি। কিন্তু তাঁরাই শাসকদলের কমিটিতে জায়গা পেয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ তৃণমূল কর্মীদের একাংশের। 


বিষ্ণুপুরের তৃণমূল কর্মী শেখ আব্দুল হান্নান বলেন, 'একনিষ্ঠ কর্মীদের বাদ দিয়ে ২০২১-এ বিধায়কের যাঁরা ঘনিষ্ঠ ছিল তাঁদের পদ দেওয়া হচ্ছে। অথচ তাঁরা তৃণমূলে যোগ দেয়নি। যাঁরা দীর্ঘদিন তৃণমূল করে আসছেন, তাঁদের জায়গা দেওয়া হয়নি।' প্রায় একই অভিযোগ বিষ্ণুপুর শহরের যুব তৃণমূল সভাপতি সুকান্ত রায়ের। তিনি বলেন, 'কোনও আলোচনা না করেই কমিটি গঠন করা হয়েছে।' দলীয় কর্মীদের ক্ষোভ টের পেয়ে, আপাতত কমিটি স্থগিত রাখার কথা জানিয়েছেন বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অলোক মুখোপাধ্যায় বলেন, 'সব জায়গাতেই কমিটি গঠন চলছে। বিষ্ণুপুর নিয়ে অভিযোগ আসে। কলকাতাতেও অভিযোগ জানানো হয়। এজন্য বিষ্ণুপুর কমিটি স্থগিত রাখছি. কয়েকদিনের মধ্যে নতুন করে কমিটি ঘোষণা করা হবে।'


বিজেপির কটাক্ষ:
শাসকের অন্তর্দ্বন্দ্ব সামনে আসতেই কটাক্ষ করেছে বিজেপি। বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি দেবপ্রিয় বিশ্বাস বলেন, 'আসল কথা হচ্ছে যিনি দুর্নীতি করতে পারবেন, পকেটে পকেটে পয়সা পৌঁছে দিতে পারবেন তিনিই জায়গা পাবেন।'


আরও পড়ুন: অবশেষে স্বস্তি? সপ্তাহশেষে বৃষ্টির পূর্বাভাস রাজ্যে, কোথায় কোথায় বৃষ্টি?