পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া: বাঁকুড়া পুরসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে এবার ২৪টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের দরজায় দরজায় প্রচারে নেমেছে তৃণমূল। লোকসভা, বিধানসভা ভোটে পুর এলাকার ভোটাররা কেন শাসক দলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, হাতজোড় করে তা জানতে চাইছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। যদিও এ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি।
ভোটের আগে সাড়া ফেলে দিয়েছিল ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি। এবার তাঁদের ত্রুটি-বিচ্যুতি জানতে, বাঁকুড়ায় ভোটারদের দুয়ারে পৌঁছে গেল তৃণমূল। দলের নেতারা ভোটারদের কাছে জানার চেষ্টা করলেন, আমরা এত উন্নয়ন করেছি বাঁকুড়া পুরসভা এলাকায়। তবুও আমরা লোকসভা ও বিধানসভার নিরিখে কেন পিছিয়ে আছি? আপনারা কেন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন?
তাদের কাছে পেয়ে, নিজেদের সমস্যার কথাও জানাচ্ছেন পুরবাসীদের একাংশ। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেছেন, আমরা বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। নিকাশি ও আবর্জনা সমস্যার কথা বললাম। নোংরা হয়ে থাকে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড , লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের কার্ড হয়েছে কিনা জানতে চাইলেন তৃণমূলের নেতারা।
রাজ্যের শতাধিক পুরসভার ভোট বাকি রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে বাঁকুড়া পুরসভাও। তাই আগেভাগে নিজেদের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে শাসকদল। কিন্তু কেন? পর্যবেক্ষকদের মতে, বর্তমানে বাঁকুড়া জেলায় তৃণমূলকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবির। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে জেলার ২টি আসনেই জয়ী হয় বিজেপি। এরপর গত বিধানসভা ভোটে ১২টি আসনের মধ্যে, বাঁকুড়া-সহ ৮টি আসনই গিয়েছে গেরুয়া শিবিরের দখলে। বাকি চারটি আসন পেয়েছে শাসকদল।
লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের ফলের নিরিখে বাঁকুড়া পুর এলাকাতেও খুব একটা স্বস্তিতে নেই শাসকদল। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে বাঁকুড়া পুরসভার ২৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৩টিতেই এগিয়ে ছিল বিজেপি। মাত্র ১টি আসনে এগিয়ে তৃণমূল। গত বিধানসভা ভোটের ফলের নিরিখেও ১৭টি ওয়ার্ডেই এগিয়ে বিজেপি। মাত্র সাতটি ওয়ার্ডে শাসকদল এগিয়ে রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ভোটারদের মন পেতে মরিয়া তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই কারণেই পুরসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে জনসংযোগের জন্য দুয়ারে পৌঁছে যাচ্ছে শাসকদল। শনিবার ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে শুরু হয়েছে এই কর্মসূচি।
রাঢ়বঙ্গ জোনের বিজেপি নেতা ও আহ্বায়ক পার্থ কুণ্ডু, বলেছেন, লোকসভা, বিধানসভায় মানুষ তৃণমূলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সামনে পুর নির্বাচন । পায়ের তলায় মাটি পাওয়ার জন্য দরজায় দরজায় যাচ্ছে। তবে বাঁকুড়াবাসী জানেন, তাঁরা পুর পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। এসবে কোনও লাভ হবে না।
বাঁকুড়া টাউন তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সিন্টু রজক বলেছেন, আমাদের কর্মীদের কোনও ভুলত্রুটি বা দোষ রয়েছে, নাকি আমাদের বিদায়ী প্রতিনিধিদের কোনও ভুল ত্রুটি রয়েছে? তাহলে কেন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন আমাদের কাছ থেকে? এ সব কথাই জানতে চাইছি ভোটারদের কাছে।
পুরভোটে তৃণমূলের নতুন এই কৌশল কতটা কাজে দেয়, তা বোঝা যাবে পুরভোটের ফল বেরনোর পরেই।