পার্থপ্রতিম ঘোষ, রঞ্জিত হালদার, বারুইপুর : বৃহস্পতিবার, শনিবারের পর রবিবার। বারুইপুরে (Baruipur) ফের মিলল নিহত প্রাক্তন নৌসেনা কর্মীর (Navy Worker) দেহাংশ। ধৃত ছেলেকে নিয়ে আজ জঙ্গলে তল্লাশি চালায় পুলিশ। সেখানেই মিলেছে দেহের নিম্নাংশ। যদিও এখনও মেলেনি হাত ও দেহ টুকরো করার করাত।


মেরুদণ্ড দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা-


কী নৃশংস ! সন্তানের হাতেই খুন হলেন বাবা ! বাবার শরীর টুকরো টুকরো করল ছেলে ! তারপর ছড়িয়ে দিল চারপাশে ! হ্যাঁ...মেরুদণ্ড দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দেওয়ার মতো এই ঘটনাই ঘটেছে বারুইপুরে ! বৃহস্পতিবার নৌ সেনার প্রাক্তন কর্মী উজ্জ্বল চক্রবর্তীর মাথা থেকে পেট পর্যন্ত দেহাংশ মিলেছিল পুকুরে ! শনিবার জঙ্গল থেকে উদ্ধার হয় পা ! আর রবিবার খোঁজ মিলল কোমর থেকে দেহের নিম্নাংশের ! 


দিল্লিতে লিভ ইন পার্টনারকে খুন করে, দেহ ৩৫ টুকরো করার ঘটনা যখন দেশবাসীকে নাড়িয়ে দিয়েছে, তখন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বারুইপুরে বাবাকে খুন করে ৬ টুকরো করার ঘটনায় বাকরুদ্ধ বঙ্গবাসী ! খুনের পর দেহাংশ কোথায় কোথায় ফেলা হয়েছে ? কোথায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে মৃতদেহ টুকরো করা সেই করাত ? তারই খোঁজে এদিন নিহতের ছেলে জয় চক্রবর্তীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালায় পুলিশ। করাত না মিললেও, পুকুর লাগোয়া জঙ্গলে উদ্ধার হয় নিহতের দেহাংশ !


নৌ সেনার প্রাক্তন কর্মী উজ্জ্বল চক্রবর্তী হত্যাকাণ্ডের পরতে পরতে নাটকীয়তা ! মঙ্গলবার বারুইপুর থানায় মিসিং ডায়েরি করে পরিবার। অথচ পুলিশ সূত্রে দাবি, জেরায় নিহতের ছেলে স্বীকার করে সোমবারই সে বাবাকে খুন করেছে। শুধু তাই নয় ! হাড়হিম করা হত্যাকাণ্ডের পরেও, পুলিশ ও সংবাদমাধ্যমের সামনে অবিচল থেকে সবাইকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন নিহতের স্ত্রী ও ছেলে!


শনিবার পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ভেঙে পড়ে নিহতের ছেলে। স্বীকার করে বাবাকে খুনের কথা। এরপরই ছেলে ও মা-কে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে দাবি, জেরায় নিহতের ছেলে জানিয়েছে, চেন্নাইয়ে একটি কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য পরীক্ষা দিতে যাওয়ার কথা ছিল তার। এর জন্য বাবার কাছে ৩ হাজার টাকা চেয়েছিল সে। কিন্তু টাকা দিতে রাজি হননি বাবা। তা নিয়েই গত ১৪ তারিখ, সোমবার শুরু হয় বচসা।
বাবা ও ছেলের মধ্যে ধস্তাধস্তিও হয়। এরপরই গলা টিপে, শ্বাসরোধ করে বাবাকে খুন করে ছেলে।


পুলিশ সূত্রে দাবি, অশান্তির আওয়াজ যাতে বাইরে না যায়, সে জন্য টিভির ভলিয়্যুম বাড়িয়ে দেন নিহতের স্ত্রী।


এর পর যা ঘটেছে, তা যে কোনও মানুষের শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ! পুলিশ সূত্রে দাবি, জেরায় ধৃতরা জানিয়েছে, উজ্জ্বলকে খুনের পর তাঁর দেহ বাথরুমে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর কাঠের মিস্ত্রির রেখে যাওয়া করাত দিয়ে ৬ টুকরো করা হয় দেহ। এরপর এক এক করে দেহাংশ বাড়ির আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় ফেলা হয়।


পুলিশ সূত্রের খবর, প্রথমে দেহের মাথা থেকে পেট পর্যন্ত অংশ সাইকেলে করে নিয়ে যায় ছেলে। ছেলেকে সঙ্গ দেন মা। সেই দেহাংশ ফেলা হয় বাড়ি থেকে ৫০০ মিটার দূরের একটি পুকুরে। এই ভাবে ধাপে ধাপে বিভিন্ন জায়গায় দেহাংশ ফেলা হয়। এরপর সকাল সাড়ে ৫টায় মা ও ছেলে মিলে বারুইপুর থানায় যায়, নিখোঁজ ডায়েরি করতে।


এদিন নিহতের ছেলে ও স্ত্রীকে বারুইপুর আদালতে তোলা হলে, তাদের ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।