হিন্দোল দে, কলকাতা: সন্তানকে চোখে হারান প্রত্যেক মা। আর এদিন বেহালায় বেলাগাম লরি নিমেষের মধ্যে কোলের সন্তানকে কেড়ে নিল মায়ের কাছ থেকে।


সকালে উঠে ছেলেকে তৈরি করেছিলেন। হয়তো টিফিনও গুছিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর ভোর ভোর স্কুলের জন্য রওনা করেছিলেন ছেলেকে। তার কয়েকঘণ্টা পরেই যে মৃত্যু এসে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে কোলের সন্তানকে তা কে জানত। কোলের ছেলে আর নেই, স্কুলের ব্যাগই আঁকড়ে ধরে কেঁদে চলেছেন মা। 


কীভাবে জানলেন দুর্ঘটনার খবর?
বাড়িতে হঠাৎ ফোন এসেছিল। স্কুল থেকে ফোন করে তাঁকে হয়েছিল এখুনি স্কুলে আসতে। এদিন পরীক্ষা ছিল ছোট্ট সৌরনীলের। মা ভেবেছিলেন হয়তো ব্য়াগ ফেলে গিয়েছে সৌরনীলের বাবা। তাই খাতা-পেন্সিল-রাবার গুছিয়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য বেরোচ্ছিলেন। তখনই তাঁকে ফোন করে সৌরনীলের বাবা দুর্ঘটনার কথা জানান, এমনটাই জানালেন ছোট্ট সৌরনীলের মা। খবর পাওয়ার পর থেকে কাঁদতে কাঁদতে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি। 


আগস্ট মাসেই জন্ম হয়েছিল সৌরনীলের। ২৫ আগস্ট জন্মদিন ছিল তার। একমাত্র সন্তানকে ঘিরে হয়তো কতশত স্বপ্ন ছিল বাবা-মায়ের। হয়তো জন্মদিনের পরিকল্পনাও শুরু হয়ে গিয়েছিল। সব পড়ে রইল... শুধু থাকল না সৌরনীল।


আজ সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ দ্বিতীয় শ্রেণির ওই পড়ুয়া বাবার সঙ্গে স্কুলে যাচ্ছিল। বেহালা চৌরাস্তার মোড়ে একটি ট্রাক শিশুটিকে ধাক্কা মারে। সঙ্গে সঙ্গে পড়ুয়ার মৃত্যু হয়। অভিভাবক তথা শিশুটির বাবাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁকে এসএসকেএম-এর ট্রমা কেয়ার সেন্টারের নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন। পড়ুয়ার মৃত্যুর পরেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে গোটা চত্বর। পুলিশের গাড়ি-বাইক জ্বালিয়ে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পাল্টা লাঠিচার্জে জখম হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারাও। 


পুলিশের গাড়ি, একের পর এক বাইকে অগ্নিসংযোগ করে উত্তেজিত জনতা! ছুটে আসেন স্কুলের হেড মাস্টারমশাই। দৃশ্যতই শোক-বিহ্বল তিনি। বললেন, স্কুলে ঢোকার পরই খবর পান তিনি....'আমাদের বাচ্চাটাকে স্পট ডেড করে দিয়েছে...আমরা গিয়ে দেখি বাচ্চাটা মরে পড়ে আছে। বাবাকে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যায়নি, আমরাই নিয়ে গিয়েছি। বিদ্যাসাগর হাসপাতাল থেকে পিজিতে ট্রান্সফার করা হয়েছে। মা বিদ্যাসাগরে পড়েছিলেন...আমরা তুলে নিয়ে এসে টিচার্স রুমে বসিয়েছি।' এরপর পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। হেড মাস্টারমশাইয়ের অভিযোগ, পাশাপাশির বেসরকারি স্কুলগুলির সামনে পুলিশি নিরাপত্তা থাকলেও এই স্কুলের সামনে পুলিশ থাকে না। তিনি বলেন, তাঁর স্কুলে গরিব ঘর থেকে শিশুরা আসে, কেউ চার-চাকা করে আসে না। তাঁর স্কুলের সামনে নেই কোনও নিরাপত্তা। এই দুর্ঘটনার জন্য পুলিশই দায়ী। 


আরও পড়ুন: বীরভূমে বিস্ফোরক পাচারকাণ্ডে NIA-র হাতে ধৃত তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি