প্রবীর চক্রবর্তী, কলকাতা: বেহালার পর্ণশ্রীতে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কুকুর-বিড়াল প্রতিপালন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগে স্থানীয়দের বিক্ষোভ। অভিযুক্তদের আটক করেও ছেড়ে দেয় পুলিশ, দাবি বিক্ষোভকারীদের। কীভাবে লাইসেন্স পেল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা? স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের নিশানায় কলকাতা পুরসভা। স্থানীয়দের দাবি, মাসদুয়েক ধরে পর্ণশ্রীর মান্নাপাড়ায় দোতলা বাড়ি ভাড়া নিয়ে চলছিল ডগ হাব। দুর্গন্ধ পেয়ে গতকাল জোর করে বাড়িতে ঢোকেন স্থানীয়রা। অভিযোগ, কুকুর-বিড়ালের দেহ পড়ে থাকতে দেখে এবং বাকি প্রাণীদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে পর্ণশ্রী থানায় জানান স্থানীয়রা। পুলিশের দাবি, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বৈধ ছাড়পত্র রয়েছে। সেই কারণেই কর্মীদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
পাড়ার ডগ শেল্টার থেকে বেশ কয়েকদিন ধরেই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। তা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন, বেহালার পর্ণশ্রীর মান্না পাড়ার বাসিন্দারা। ডগ শেল্টারের লাইসেন্স দেওয়ায়, পুরসভার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন খোদ তৃণমূল কাউন্সিলর। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, মাস দুয়েক ধরে এই বাড়ির নীচে ডগ শেল্টার রয়েছে। কয়েকদিন ধরে দুর্গন্ধ সেখানে যান এলাকাবাসীরা। ডগ শেল্টারে পৌঁছতেই চক্ষু চড়কগাছ। ঘরের মধ্যে মরে পড়ে রয়েছে কুকুর-বিড়াল। সেই ঘরেই আবার জীবিতদের বাস। ১৩২ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সঞ্চিতা মিত্র বলেন, "পুরসভার আগে থেকে উচিত সবকিছু যাচাই করা উচিত।'' স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার শেল্টার হোম চালাচ্ছিলেন অরুণিমা রায় নামে একজন। সোমবার রাতে, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পর্ণশ্রী থানার পুলিশ। অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার সহ বেশ কয়েকজন কর্মীকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই এলাকার বাসিন্দা বিজন মজুমদার বলেন, "যারা অস্বাস্থ্য করর পরিবেশে আছে, তাদের কী হবে এবার যারা ওখানে বেঁচে থাকবে। চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আছে এরকম বাইট..নিশ্চয়ই কোনও অসৎ উদ্দেশে কিছু করছিল ওখানে।'' স্থানীয় সূত্রে খবর, গত ২ মাস আগে, পর্ণশ্রীর সাগরমান্না রোডের মান্নাপাড়ায় এই দোতলা বাড়ি ভাড়া করেই, একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার শেল্টার হোম চালাচ্ছিলেন অরুণিমা রায়। পর্ণশ্রীর রবীন্দ্রনগর ও ভূতনাথ পার্কেও রয়েছে এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার শাখা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেশ কয়েকদিন ধরেই , মান্নাপাড়ার এই বাড়ি থেকে তীব্র দুর্গন্ধ বেরোতে থাকে। সন্দেহ হওয়ায়, সোমবার রাতে সেখানে একসঙ্গে হানা দেয় এলাকার বাসিন্দা সহ বেশ কিছু পশুপ্রেমী সংগঠন। প্রথমে বাধা পেলেও, পরবর্তীতে ঘরে ঢুকে সামনে আসে এই চরম অমানবিক ছবি। উদ্ধার করা হয় বেশ কিছু কুকুর-বিড়ালকেও। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় পর্ণশ্রী থানায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, তড়িঘড়ি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার সহ কর্মীদেরকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হলেও, কিছুক্ষণের মধ্যে থানা থেকে ছেড়েও দেওয়া হয়। পশুপ্রেমীদের একাংশের অভিযোগ, থানায় গেলেও, কোনও অভিযোগ নেওয়া হয়নি তাদের। যদিও এ প্রসঙ্গে পুলিশের দাবি, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে বৈধ ছাড়পত্র রয়েছে। সেই কারণেই কর্মীদেরও ছেড়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থলে আসেন ১৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সঞ্চিতা মিত্র। পুরসভার বিরুদ্ধে ক্ষোভও উগরে দেন তিনি। তিনি বলেন, "কর্পোরেশনের এই অনলাইনে যে লাইসেন্স। কার জমিতে কে ঢুকছে, কে লাইসেন্স পাচ্ছে, এটা ইনস্পেকশনের পরে এটাকে এগনো উচিত। কাকে আপনারা বাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন, বাড়ির মালিককে তো চেপে ধরা উচিত। আপনারা পয়সা পাচ্ছেন ঢুকিয়ে নিচ্ছেন। কুকুর এনে তারা হয়তো মৃত হোক বা বিড়াল তারা মৃত, তাদের সবকিছু নিয়ে হয়তো সাপ্লাই করা হত।''