প্রদ্যোৎ সরকার, নদিয়া: আজই ঘোষণা হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশজোড়া SIR-এর দিনক্ষণ, আর তার আগেই উঠে এল গুরুতর অভিযোগ। ২০০২-এর ভোটার লিস্টে যে পরিবারের নাম নেই, সেই পরিবারের সদস্য পেয়েছেন BLO-র দায়িত্ব!নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের ব্লকে এমন অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

Continues below advertisement

আরও পড়ুন, আজই ঘোষণা হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশজোড়া SIR-এর দিনক্ষণ, ২৩ বছর বাদে বাংলায় ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন

Continues below advertisement

নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের দুর্গাপুরের ৭৫ নম্বর বুথের BLO মিলন রায়। মিলনবাবু ওই গ্রামেরই দুর্গাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ২০০২-এর ভোটার লিস্টে ৭৫ নম্বর বুথে ৫৫৭ জনের নাম ছিল। ২০২৫-এ ওই বুথে ভোটারের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ১৬ বেড়েছে ভোটার, ঢুকেছে BLO-র দায়িত্বপ্রাপ্ত মিলন রায়ের পরিবারের নাম। এই ব্লকে অনেকেরই ২০০২-এর ভোটার লিস্টে নাম নেই, দাবি মিলন রায়ের। BDO-কে জানানো হয়েছে, তিনি কর্ণপাত করেননি, দাবি কৃষ্ণগঞ্জ পঞ্চায়েত প্রধানের। মিলন রায় বিজেপি করেন, দাবি পঞ্চায়েত প্রধানের। মিলন বাবু কত বড় প্রভাবশালী তৃণমূলের নেতা, তা তাঁকে না সরানোই প্রমাণ করছে, দাবি  বিজেপি জেলা নেতৃত্বর। 

SIR বা ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনের কাজ শুরু হয়ে গেলেই, ঝাপিয়ে পড়তে হবে বুথ লেভেল অফিসার বা BLO-দের। কারণ তাঁদের উপরে রয়েছে গুরুদায়িত্ব, যার মধ্যে অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিলিয়ে দেখা সেখানকার বাসিন্দাদের নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় রয়েছে কিনা! আর এখানেই বিপাকে পড়েছেন, নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের বাসিন্দা মিলন রায়। প্রাথমিক স্কুলের ওই শিক্ষক,কৃষ্ণগঞ্জের ৭৫ নম্বর বুথের BLO। ১৫ বছর ধরে ওই কাজ করে আসছেন, অথচ তাঁর কিংবা পরিবারের কারও নাম নেই ২০০২ সালের ভোটার তালিকায়।এই পরিস্থিতিতে কাজ থেকে অব্যাহতি চাইছেন তিনি। এর জন্য BDO-র কাছেও তিনি আবেদন জানিয়েছেন বলে দাবি করেছেন।

কৃষ্ণগঞ্জের ৭৫ নম্বর বুথ BLO  মিলন রায় বলেন, ২০০২ সালে (ভোটার তালিকায়) আমাদের পরিবারের নাম নেই। কিন্তু '৯৫ সালে আমাদের নাম ছিল এবং পরে সেই নামটা কীভাবে বাতিল হয়ে যায়, বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো বলতে পারতেন। আপাতত ২০০২ সালের তালিকায় আমাদের পরিবারের (নাম) নেই।  BDO অফিসও জানে। তার জন্য আমি আগে অনেকবারই BLO-র কাজ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু আমাকে ছাড়েনি। বিষয়টি নিয়ে কৃষ্ণগঞ্জের BDO অবশ্য জানিয়েছেন, ২০০২ সালে ভোটার তালিকায় নাম নেই বলে, BLO-র কাজ থেকে মিলন রায় লিখিতভাবে অব্যাহতি চেয়েছেন কিনা, বিষয়টি তিনি দেখবেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের গাইডলাইন মেনেই যা করার, করা হবে। 

SIR শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলির হুমকি-হুঁশিয়ারির মুখে পড়তে হচ্ছে BLO-দের। এবার কৃষ্ণগঞ্জের এই BLO-র রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও, তরজা শুরু হয়ে গেছে তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে।কৃষ্ণগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল নেতা ও প্রধান  মদন ঘোষ বলেন, আমরা এটা জানিয়েছিলাম। জানানোর পরেও সেই BLO-কে বাদ দেওয়া যায়নি। উনি  মিলন রায় বিজেপি করে।  আমি কৃষ্ণগঞ্জের বিডিওকে এই ব্যাপারটা জানিয়েছিলাম এবং তাকে বিএলওর দায়িত্ব থেকে সরানোর জন্য অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু  বিডিও কোন কর্ণপাত করেননি। ২০০২ সালে যাদের ভোটের লিস্টের নাম নেই তাদেরকে যদি সেই দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজ করানো হয়, কতটা সঠিক হবে প্রশ্ন রয়েছে সকলের মধ্যে। 

রানাঘাট দক্ষিণ বিজেপি সম্পাদক  অমিত প্রামানিক বলেন, মিলনবাবু কত বড় প্রভাবশালী তৃণমূলের নেতা যার জন্য বিডিওকে তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান সরানোর দাবি করলেও বিডিও সরাতে পারছেন না। এই থেকেই প্রমাণ হয় মিলন বাবুর তৃণমূলের কত বড় নেতা। যদিও কৃষ্ণগঞ্জের BDO-র দাবি, মিলন রায় ১৫ বছর ধরে BLO-র দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আসেনি। এদিকে যাঁর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি হচ্ছে, সেই BLO-র দাবি, তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন।

কৃষ্ণগঞ্জ ৭৫ নম্বর বুথ BLO  মিলন রায় : আমি কোনও রাজনীতি করি না। আমি নিরপেক্ষ লোক। প্রশ্ন :  সাধারণ ভোটার?কৃষ্ণগঞ্জ ৭৫ নম্বর বুথ BLO  মিলন রায় :  হ্যাঁ, সাধারণ ভোটার। 

গত ১৫ বছর ধরে BLO-র দায়িত্ব সামলেছেন মিলন রায়।কিন্তু, এর মধ্যে একবারও ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনের কাজ হয়নি।তবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি না পেলে, SIR-এর কাজও করতে হবে তাঁকে।