পার্থপ্রতিম ঘোষ, রুমা পাল ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর পরবর্তী পদক্ষেপ শুরু করল নির্বাচন কমিশন। আজ থেকে আগামী ১ মাস BLO-দের কাছে খসড়া তালিকা সংক্রান্ত অভিযোগ জানাতে পারবেন ভোটাররা। এরপর যাঁদের শুনানির জন্য ডাকা হবে, তাঁদের বাড়ি গিয়ে এই সংক্রান্ত নোটিস পৌঁছে দেবেন বুথ লেভেল আধিকারিক। ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খসড়া ভোটার তালিকা সংক্রান্ত অভাব-অভিযোগ, শুনানি এবং ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া চলবে বলে জানিয়েছে কমিশন।
রাজ্যে SIR-এর এনুমারেশন পর্ব মিটে যাওয়ার পর, মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করে দিল নির্বাচন কমিশন। আপাতত সেই তালিকায় রয়েছে ৭ কোটি ৮ লক্ষ ১৬ হাজার ৬৩১ জনের নাম। এখন প্রশ্ন হল, খসড়া তালিকায় আপনার নাম থাকা মানেই কি চূড়ান্ত তালিকাতেও আপনার নাম থাকবে? এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট জানিয়েছে, এখন প্রায় ২ মাস ধরে চলবে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ইতিমধ্যেই তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। মঙ্গলবার থেকেই শুরু হচ্ছে আপত্তি বা অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া, যা চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। অভিযোগ বা আপত্তি জানানোর সময় আগামী ১ মাস ধরে। ভোটার তালিকা সংক্রান্ত অভিযোগের কাজ করার জন্য জেলায় জেলায় স্কুলের রুম চেয়ে কমিশনের তরফে পাঠানো হয়েছে চিঠি। ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত জমা পড়া যাবতীয় অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ নেবে নির্বাচন কমিশন। এরপর ERO মনে করলে সংশ্লিষ্ট ভোটারকে ডাকা হবে শুনানিতে। যাঁরা শুনানিতে ডাক পাবেন, তাঁদের বাড়িতে গিয়ে নোটিস দিয়ে আসবেন BLO।
কমিশনের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী মঙ্গলবার থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খসড়া ভোটার তালিকা সংক্রান্ত অভাব-অভিযোগ, শুনানি এবং ভেরিফিকেশন পর্ব চলবে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি।কমিশন সূত্রে খবর, খসড়া ভোটার তালিকা ম্যাপিং হয়েছে ৩ ভাগে। প্রথম প্রোজেনি ম্যাপিং, সেল্ফ ম্যাপিং ও নো ম্যাপিং। কমিশন সূত্রে খবর, এর মধ্যে প্রোজেনি ম্যাপিং, সেল্ফ ম্যাপিংয়ে নাম থাকা ভোটারদের হিয়ারিংয়ে ডাকার সম্ভাবনা কম।তবে BLO মারফত জানা যাবে কাদের ডাকা হবে শুনানিতে।প্রায় ৩০ লক্ষ ভোটার আনমাপিংয়ের তালিকায় রয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন। এছাড়াও ১কোটি ৬৭ লক্ষ ভোটারের তথ্যে অসঙ্গতি রয়েছে। তবে তাঁদের মধ্য়ে কাদের শুনানিতে ডাকা হবে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।
প্রশ্ন: খসড়া ভোটার তালিকায় আপনার নাম যদি না থাকে, তাহলে কী করবেন?
নির্বাচন কমিশন: ফর্ম ৬-এর অ্য়ানেক্সার ৪ ফিলআপ করে জমা দিতে হবে। প্রশ্ন: কাদের শুনানিতে ডাকা হবে? নির্বাচন কমিশন: ২০০২-এর সঙ্গে ২০২৫-এর ম্য়াপিংয়ে যাদের নাম পাওয়া যায়নি এবং যাদের জমা দেওয়া তথ্যে ত্রুটি ধরা পড়েছে, তাদেরই শুধু শুনানিতে ডাকা হবে। প্রশ্ন: শুনানিতে কীভাবে ডাকা হবে? BLO বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুনানির নোটিস পৌঁছে দেবেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রশ্ন: এনুমারেশন ফর্মের নীচে ২০০২-এর অংশ যারা পূরণ করতে পারেনি, তারা সবাই কি শুনানিতে ডাক পাবেন? নির্বাচন কমিশন : হ্য়াঁ, তাদের সবাইকে শুনানিতে ডাকা হবে। প্রশ্ন: আধার কার্ড ছাড়া ১১টা নথি কী কী, যার অন্তত একটা আপনাকে শুনানিতে নিয়ে যেতেই হবে? নির্বাচন কমিশন : কেন্দ্রীয় অথবা রাজ্য সরকারের কর্মী হিসাবে কাজ করেছেন অথবা পেনশন পান এমন পরিচয়পত্র।
১৯৮৭ সালের পয়লা জুলাইয়ের আগে ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, LIC, স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া যে কোনও নথি। বার্থ সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট, মাধ্যমিক বা তার পরের শিক্ষাগত যোগ্য়তার সার্টিফিকেট, রাজ্য সরকারের অধীনস্থ কোনও উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের দেওয়া বাসস্থানের সার্টিফিকেট, ফরেস্ট রাইট সার্টিফিকেট, জাতিগত সার্টিফিকেট, স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া ফ্য়ামিলি রেজিস্টার, সরকারের দেওয়া ল্য়ান্ড অথবা হাউস অ্য়ালটমেন্ট সার্টিফিকেট। প্রশ্ন: এমন যদি হয় এদিকে খসড়া ভোটার তালিকায় আপনার নাম নেই। অথচ কোনও শুনানির ডাক বা নোটিসও পেলেন না। তখন কী করবেন? নির্বাচন কমিশন : ফর্ম ৬-এর অ্য়ানেক্সার ৪ ফিলআপ করে নতুন করে ভোটার তালিকায় নাম তুলতে হবে। প্রশ্ন: আপনার নাম ২০০২ সালের তালিকার সঙ্গে ম্য়াপিং এবং ম্য়াচিং হলেও কি আপনাকে শুনানির জন্য় ডাকা হতে পারে? নির্বাচন কমিশন: ERO মনে করলে আপনাকে ডাকতে পারেন। প্রশ্ন: SIR-এ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে জাল নথি পেশ করলে বা ভুল তথ্য় দিলে তার কী শাস্তি হতে পারে?
নির্বাচন কমিশন: ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (BNS)-এর তিনশো সাঁইত্রিশ নম্বর ধারা অনুযায়ী, কেউ যদি নথি জাল করেন, তাহলে সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানা হতে পারে। প্রশ্ন: এখন আপনার মনে এ প্রশ্ন আসতেই পারে যে, কীসের ভিত্তিতে খসড়া ভোটার তালিকায় নাম বাদ পড়েছে? নির্বাচন কমিশন: যাদের মৃত্য়ু হয়েছে, যাঁরা ফর্ম ফিল আপ করে জমা দেননি এবং নির্বাচন কমিশন যাঁদের ডুপ্লিকেট ভোটার হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তাদের নাম বাদ পড়েছে। প্রশ্ন: খসড়া ভোটার তালিকায় নাম বা ঠিকানা ভুল থাকলে কী করতে হবে? নির্বাচন কমিশন: ফর্ম ৮ পূরণ করতে হবে। প্রশ্ন: প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনের ঠিক করা শুনানির দিন কি পাল্টানো যাবে?
নির্বাচন কমিশন: শুনানির দিন পাল্টানোর জন্য় ERO-র কাছে আবেদন করতে হবে। প্রশ্ন: শারীরিক অসুস্থতার জন্য় বা অন্য় কোনও কারণে শুনানিতে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি না থাকলে কী করতে হবে? এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন চাইলে, প্রয়োজনে ভার্চুয়াল শুনানির ব্য়বস্থাও করতে পারে। প্রশ্ন: শুনানির ফলাফল কী হল, কী করে জানতে পারবেন?
নির্বাচন কমিশন: ERO কী সিদ্ধান্ত নিলেন, সেটা ডাকযোগে আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে। এনুমারেশন ফর্মে দেওয়া মোবাইল নম্বরে SMS-ও চলে আসবে। এখন দেখার এই ঝাড়াই বাছাইয়ের পর শেষপর্যন্ত কতজনের নাম পশ্চিমবঙ্গের চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ঠাঁই পাবে, আর বাদ পড়বে কত নাম?