আশাবুল হোসেন,অর্ণব মুখোপাধ্যায় ও বিটন চক্রবর্তী, কলকাতা: রাজ্যে তৃতীয়বার সরকার গঠনের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কর্মসংস্থানকে প্রধান লক্ষ্য বলেছিলেন। তবে রাজ্যে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে বিনিয়োগের যত বড় প্রস্তাবই আসুক না কেন, আদতে তা কতটা ফলপ্রসু হয়েছে ? কর্মসংস্থান হয়েছে কতজনের ? এসব প্রশ্ন আগেও তুলেছে বিরোধীরা। সঙ্গে এগারো সালের পর 'শিল্প দূরীকরণ' বলে তীব্র কটাক্ষ তো উপরিপাওনা ছিলই। আর তা আরও বেড়ে গিয়েছিল টাটা ইস্যুতে। তবে দেখতে দেখতে অনেকগুলি বছর পার। বছর পেরোলেই লোকসভা নির্বাচন। তাই বিষয়টি বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে। আজ থেকে ফের শুরু হচ্ছে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন (BGBS)। আর ঠিক তার আগে লগ্নি নিয়ে রাজ্য সরকারকে খোঁচা দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। তিনি বলেন, 'জনগণের টাকা ধ্বংস করতে, শুরু হতে চলেছে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের সপ্তম পর্ব।'


'এতদিনে কত লগ্নি হয়েছে, কত কর্মসংস্থান হয়েছে..' ?


এক্স হ্যান্ডলে কটাক্ষ করে শুভেন্দু প্রশ্ন তুলেছেন, 'এতদিনে কত লগ্নি হয়েছে, কত কর্মসংস্থান হয়েছে, সেই সমস্ত তথ্য কি সামনে আনবে রাজ্য সরকার?' পাল্টা বিরোধী দলনেতাকে নিশানা করেছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। বাংলায় শিল্পায়নের লক্ষ্যে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের সূচনা। আর রাজ্য সরকারের এই মেগা ইভেন্ট শুরুর আগে রাজনীতিও শুরু হয়ে গেছে পুরোদমে।বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের গত ৬টি পর্বে কত লগ্নি এসেছে? বিনিয়োগের প্রস্তাব কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে? কর্মসংস্থানই বা কত হয়েছে? এই সমস্ত প্রশ্ন তুলে,সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করেছে বিরোধীরা।






'কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী কি তা বাংলার মানুষকে জানাবেন?'


শুভেন্দু অধিকারী তাঁর এক্স হ্যান্ডল পোস্টে লিখেছেন,'জনগণের টাকা ধ্বংস করতে, শুরু হতে চলেছে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের সপ্তম পর্ব। বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে, আসলে বাণিজ্যও নেই আর তা বিশ্বজনীন হওয়া থেকেও অনেক দূরে। বাংলার মানুষকে কেবলমাত্র চোখ ধাঁধানো মিথ্যা পরিবেশন করা হবে।' বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের গত ৬টি পর্বে, যে ১৫ লক্ষ ৭ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাবিত লগ্নির কথা ফলাও করে বলা হচ্ছিল, তা কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী কি তা বাংলার মানুষকে জানাবেন? দয়া করে  যেখানে যা হয়েছে, কতজন চাকরি পেয়েছেন - তার একটা তালিকা প্রকাশ করুন না। '


পাল্টা পরিসংখ্যান দিয়ে, তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ সোশাল মিডিয়া পোস্টে লেখেন,'বিরোধী দলনেতা তো বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনকে আক্রমণ করতে গিয়ে স্ববিরোধী কথা বলে বসলেন। তাঁর পোস্ট করা ৮ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের ভিডিও-র মধ্যে ৭ মিনিটই, বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের গত ৬টি পর্বে যে মোট ১৫ লক্ষ ৭৪ হাজার ৭৯২ কোটি টাকার লগ্নির প্রস্তাব এসেছে, তার কথাই তুলে ধরা হয়েছে। মিস্টার অধিকারীর জ্ঞাতার্থে জানাতে চাই যে, এখন বাংলার GDP ১২.৬ শতাংশ, যা জাতীয় গড়কেও ছাপিয়ে গিয়েছে। ২০১১-র ৪ লক্ষ ৭৪ হাজার কোটি টাকার তুলনায়, ২০২০-২১-এ, তা, তিনগুণ বে়ড়ে হয়েছে ১৪ লক্ষ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। বাংলার গ্রস ভ্যালু অ্যাডেড বা GVA-র ৭৫ শতাংশের বেশি এসেছে শিল্প এবং উৎপাদনক্ষেত্র থেকে। MSME-র নিরিখে গোটা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় বাংলা।'


আরও পড়ুন, আজমির থেকে অন্ধ্রপ্রদেশে বাড়ল পেট্রোলের দর, কলকাতায় জ্বালানির দর কী ?


গতবছর বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে ৩ লক্ষ ৪২ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে বলে দাবি করে রাজ্য সরকার। এখানেই বিরোধীদের প্রশ্ন,প্রতিবার যত লগ্নির কথা ঘোষণা করা হয়, তা কতটা বাস্তবায়িত হয়?কতজন চাকরি পান? ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকি বলেছেন, 'অর্থনৈতিক উন্নতি হবে, পরিয়ায়ী শ্রমিক থাকবে না। এটা আমরা চাই। কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাতে হবে, গতবছর কত উনি খরচ করেছিলেন, কত ইনভেস্ট হয়েছিল।'গত সেপ্টেম্বরে শিল্পের খোঁজে স্পেন থেকে দুবাই সফর করে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে উদ্যোগের কতটা প্রতিফলন এবার বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে দেখা যায় - দেখার বিষয় এখন সেটাই।