উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা : তারার দেশে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কাস্তে-হাতুড়ি-তারার পতাকা গায়ে জড়িয়েই শেষ যাত্রায় বেরোন তিনবারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। প্রিয় নেতাকে শেষবারের মতো দেখার আকুতি নিয়ে শামিল হলেন তাঁর অসংখ্য অনুরাগী ও গুণমুগ্ধরা। আর সহকর্মী-সতীর্থদের জন্য ছেড়ে গেলেন তাঁর অজস্র স্মৃতি। এই যেমন একটা সময়ে শত ব্য়স্ততার মধ্য়েও, আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের অফিসে যাওয়াটা ছিল তাঁর রোজকার রুটিন। মুখ্য়মন্ত্রী থাকাকালীনও দিনে দু'বার করে, এই অফিসে আসতেন তিনি। আর তা এতটাই ঘড়ি ধরে ছিল যে সময়গুলো মুখস্থ হয়ে রয়েছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর দীর্ঘদিনের সতীর্থ এবং এই অফিসেরই বাসিন্দা বিমান বসুর। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যানের স্মৃতিচারণায় উঠে এল সেইসব কথাই।
বিমান বসু বলেন, "শরীর ভাল যখন ছিল, রোজ আসত। ঠিক সাড়ে ৯টায় ঢুকে যেত। সাড়ে ৯টায় ঢুকে যেত। তারপর এখান থেকে বেরোত ১২টা -১২.১৫ মিনিট নাগাদ। কারণ ও স্নান না করে বেরোত। তারপর গিয়ে স্নান করে খেত। মিটিং থাকলে তো দেরি হত। এটা ছিল নিয়মিত রুটিন। এর কোনও ব্য়তিক্রম ছিল না। আবার বিকেলবেলা চলে আসত। ঠিক ৪টের সময় চলে আসত। বিকেলবেলা ৪টের সময় আসত। সাড়ে ৭টায় বেরিয়ে যেত। কখনও ৮টায় বেরোত। আর মিটিং থাকলে তো অন্য়রকম হত।"
যখন উনি মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখনও এই রুটিন মেনে চলতেন ?
এপ্রশ্নের উত্তরে বিমানবাবু বলেন, "একই রুটিন ছিল। মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় একটু আগে বেরোত। আগে বেরিয়ে রাইটার্স বিল্ডিং যেত। রাইটার্স বিল্ডিং থেকে ১টার সময় বাড়িতে যেত খাওয়া-দাওয়া করার জন্য। চান করে, খাওয়া-দাওয়া করে তারপরে আবার রাইটার্স বিল্ডিংয়ে যেত। রাইটার্স বিল্ডিং থেকে এখানে ফিরত। ৬টা-সাড়ে ৬টায় আসত। কখনও একটু বেশি হত। কিন্তু, এখানে ছুঁয়ে যেত। মানে, পার্টি অফিসটা ছিল মন্দিরের মতো। এখানে ছুঁয়েই বাড়ি যেত। কখনো কখনো হাতে বই নিয়ে আসত। এখানে বসেই পড়ত। গাড়িতে থাকত, নিয়ে এসে পড়ত। বা, এখানে থাকত। এখান থেকে বই নিয়ে পড়ত। "
এদিন সকাল থেকেই তপসিয়ার পিস ওয়ার্ল্ডের সামনে জড়ো হন অনেকে। কারও হাতে ফুল, কারও হাতে ছবি। আগেভাগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য ও সন্তান সুচেতন। ছিলেন মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, রবীন দেবরা। সকাল ১০.৩৫ মিনিটে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর দেহ পিস ওয়ার্ল্ড থেকে বের করে শববাহী গাড়িতে তোলা হয়। বেঙ্গালুরু থেকে আনানো লাল জারবেরা ফুল আর রক্ত পতাকা দিয়ে সাজানো হয়েছিল শববাহী গাড়ি। সেখানেই বুদ্ধবাবুকে শেষ শ্রদ্ধা জানান অনেকে।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।