ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা : তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ জেলা সভাপতি এখন জেলে। এই পরিস্থিতিতে, প্রায় রোজই দিদির সুরক্ষাকবচ কর্মসূচিতে গিয়ে তাঁরই জেলায় মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন অনুব্রতর (Anubrata Mondal) সেনাপতিরা। প্রশ্ন উঠছে, অনুব্রত জেলে আছেন বলেই কি এখন মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন বীরভূমের (Birbhum) মানুষ ?


ভক্তে দেখায় রক্তচক্ষু যারা,​​ তারা হবে লয় ! বলো,​​ এ পৃথিবী মানুষের,​​ ইহা কাহারও তখ্ত্ নয় ! লিখেছিলেন বহু যুগ আগে ! কিন্তু, বিদ্রোহী কবির এই লাইনগুলো কালজয়ী ! স্থাল-কাল-পাত্র বদলায়, কিন্তু সত্য়িটা বদলায় না ! দিন কারও এক যায় না। একটা সময় যে বীরভূমে অনুব্রত মণ্ডল
ও তাঁর সেনাপতিদের সামনে মুখ খোলা তো দূর, চোখে চোখ রেখে তাকানোও না কি দুঃসাহসিক কাজ ছিল বলে বিরোধীরা অভিযোগ করে, আজ সেই বীরভূমেই, অনুব্রতর সেনাপতিরা, যেখানেই দিদির দূত হিসাবে যাচ্ছেন, সেখানেই সাধারণ মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়ছেন ! কারণ, অনুব্রত এখন জেলবন্দি !

পুলিশকে বোমা মারা কিংবা গাঁজা কেসে ফাঁসানোর হুমকিও এখন অতীত ! অনুব্রত-হীন বীরভূমে, ৪ জন নেতার উপরে দায়িত্ব দিয়েছে তৃণমূল। তাঁরা হলেন, সিউড়ির তৃণমূল বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, বোলপুরের তৃণমূল বিধায়ক ও রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ এবং রামপুরহাটের তৃণমূল বিধায়ক ও বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।

শুক্রবার সিউড়িতে ফের গ্রামবাসীর ক্ষোভের মুখে পড়েন, স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী। 'দিদির দূত' কর্মসূচিতে, এর আগে ইলামবাজারেও বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন তিনি। গত, সোমবার খয়রাশোলে বিক্ষোভের মুখে পড়েন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। এর আগে, মহম্মদবাজারে দিদির দূত কর্মসূচিতে গিয়ে গ্রামবাসীর ক্ষোভের মুখে পড়েন রামপুরহাটের তৃণমূল বিধায়ক ও বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। দিদির সুরক্ষাকবজ কর্মসূচিতে গ্রামবাসীর একাংশের ক্ষোভের মুখে পড়েন লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ।
তৃণমূলের অন্দরে, অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তৃণমূল বিধায়ক ও দাপুটে মন্ত্রী মলয় ঘটক। সেই মলয় ঘটককেও, দুবরাজপুরে পড়তে হয় গ্রামবাসীর ক্ষোভের মুখে। আর, শুক্রবার ফের দুবরাজপুরে দিদির দূত হয়ে গ্রামে এসে, দফায় দফায় বিক্ষোভের মুখে পড়লেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়।


এপ্রসঙ্গে কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র অবশ্য বলছেন, দিদির দূত বিজেপির ভূত হয়ে যাবে। ৯৮ শতাংশ আসনে তৃণমূল জিতবে। টাইটেল হবে শান্তির নির্বাচন। শান্তি হলেই মানুষ ভোট দেবে।

এদিকে ১২ জানুয়ারি, নদিয়ার চাকদার ঘেটুগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের সহিষপুর গ্রামে "দিদির দূত" কর্মসূচিতে গিয়ে গ্রামের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা ও বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। কার্যত হাতজোড় করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েই তাঁকে। সেই ঘটনার পর শুক্রবার ফের ক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি।


আরও পড়ুন ; নিয়োগ দুর্নীতির টাকা শেষমেশ পৌঁছেছিল কার কাছে ? বিশেষ কাউকে আড়ালের চেষ্টা কুন্তলের ?