বীরভূম : লাল মাটির দেশ, রবি ঠাকুরের বিচরণক্ষেত্র। খনিজ, কয়লায় ঠাসা। সঙ্গে শান্তিনিকেতন, পৌষ মেলা, বসন্ত উৎসব, কোপাই-খোয়াই থেকে জমিদারবাড়ি অভয়ারণ্য। চোখ জোড়ানো সবুজ ও লাল মাটির দেশ। বীরভূম (Birbhum)। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য থেকে ঘুরে বেড়ানোর জায়গা। বঙ্গের এই জেলা আপনাকে পদে পদে কাছে ডেকে নেবে। সাবেকি প্রশস্তির সঙ্গে উপহার দেবে আধুনিক নান্দনিকতার। একঝলকে দেখে নেওয়া যাক বীরভূমে কোন কোন জায়গা হয়ে উঠতে পারে আপনাদের দিন কয়েকের আদর্শ ট্রাভেল ডেস্টিনেশন।
১. হেতমপুর রাজবাড়ি :- বীরভূমে যদি জমিদারবাড়ি নাম নেওয়া যায় তাহলে সবার আগে আসবে এই হেতমপুর জমিদারবাড়ি (Hematpur Jamidarbari)। আদতে এটি জমিদারবাড়ি হলেও স্থানীয় লোকেরা একে রাজবাড়ি বলেই ডাকে। বীরভূমের দুবরাজপুর (Dubrajpur) শহরের একদম পাশেই অবস্থিত এই জমিদারবাড়ি। পর্যটকদের কাছে এটি একটি দর্শনীয় স্থান।
২. শান্তিনিকেতন : বোলপুর (Bolpur) শান্তিনিকেতন ভ্রমণ উৎসাহীদের জন্য একটি নিখুঁত সাপ্তাহিক ছুটির জায়গা। রবি ঠাকুরের ভূমি নামে জনপ্রিয় শান্তিনিকেতন (Shantiniketan) সৌন্দর্য, সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অনবদ্য মিশ্রণ। এছাড়া কোপাই নদীর মোহনীয়তা সবসময়ই দেশ-বিদেশের মানুষকে আকৃষ্ট করে।
৩. সুরুল জমিদারবাড়ি : ঐতিহাসিক দিক থেকে খুবই প্রাচীন জেলা বীরভূম। প্রাচীনকাল থেকেই এই জেলায় বহু জমিদারির পত্তন হয়েছিল, তারমধ্যে একটি হল এই সুরুল জমিদারবাড়ি (Surul Jamidarbari)। সুরুল বোলপুরের একদম কাছেই একটি গ্রাম যা শান্তিনিকেতন থেকে মাত্র ৩/ ৪ কি.মি দূরে অবস্থিত। এখানে খুব ধুমধাম করে দুর্গাপুজো হয়।
৪. বল্লভপুর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য : এই বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বোলপুরের কাছে অবস্থিত একটি সুন্দর এলাকা। এই বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যটি ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বনভূমি অঞ্চলটি অনেক উদ্ভিদ এবং প্রাণীর আশ্রয়স্থল এবং তাই প্রকৃতি প্রেমী এবং বন্যপ্রাণী উৎসাহীদের কাছে একটি বড় আকর্ষণ বল্লভপুর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য (Ballavpur Santuary)।
৫. মামা ভাগ্নে পাহাড় : মামা-ভাগ্নে পাহাড় (Mama Vagne Pahar) সম্পর্কে আমরা সকলেই প্রায় ছোটোবেলায় বইতে পড়েছি। দুবরাজপুর স্টেশন থেকে প্রায় ৪ কিমি দূরে দুবরাজপুর - পাণ্ডবেশ্বর রাজ্য সড়কের একদম ধারেই এই পাহাড়টি অবস্থিত। এখানে একটি খুব উচু পাহাড়েশ্বর বলে একটি মন্দির আছে, এই মন্দিরের ভেতর দিয়েই এই মামা ভাগ্নে পাহাড় যাওয়ার রাস্তা। এখানে পিকনিক করতেও প্রচুর মানুষ এসে থাকে।
৬. শক্তিপীঠ : বীরভূম হল একটি পবিত্র গন্তব্যস্থল যা অনেক আদিশক্তি পীঠ দ্বারা বেষ্টিত যা বাংলার এবং বাইরের বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য প্রধান আকর্ষণ। প্রতিদিন ভক্তদের ভিড় নামে এই পবিত্র স্থান গুলিতে। বীরভূমে বিদ্যমান শক্তিপীঠগুলি হল- অট্টহাস, তারাপীঠ, বক্রেশ্বর, কঙ্কালিতলা, নন্দিকেশ্বরী এবং নলহাটি।
৭. জয়দেব কেন্দুলি : জয়দেব কেন্দুলি বীরভূমের ইলমবাজার ব্লকের অজয় নদীর তীরে অবস্থিত ছোট্ট একটি গ্রাম। গ্রামটি ছোট হলেও গ্রামের এক ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। মনে করা হয় এই গ্রামেই নাকি গীত গোবিন্দের রচয়িতা এবং রাজা লক্ষণ সেনের সভাকবি জয় দেবের জন্ম হয়েছিল। সেই থেকেই গ্রামটির সাথে জয়দেব নামটি যুক্ত হয়ে গেছে।
৮. সোনাঝুরি : খোয়াই সোনাঝুরি বন হল বীরভূমের একটি অপূর্ব জায়গা। শান্ত গ্রামীণ পরিবেশ এবং সবুজের মাঝে লুকিয়ে থাকা ঘন জঙ্গল বাংলা এবং বাইরের অনেক দর্শককে আকর্ষণ করে।
৯. নন্দন আর্ট মিউজিয়াম ও গ্যালারি : নন্দন আর্ট মিউজিয়াম এবং গ্যালারি শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের (Viswa Bharati University) ক্যাম্পাসের একটি অসাধারণ জায়গা। এই জাদুঘরটি কলা ভবনের অংশ, এতে সঙ্গীত ভবন এবং কালো বাড়িও রয়েছে। পর্যটকদের কাছে এটি একটি অন্য়তম দর্শনীয় স্থান।
১০. সৃজনী শিল্পগ্রাম : সৃজনী শিল্পগ্রাম শান্তিনিকেতনের বীরভূমে অবস্থিত ইস্টার্ন জোনাল কালচারাল সেন্টারের একটি ছোট গ্রাম্য পর্যটন স্পট। কমপ্লেক্সটি ২৬ বিঘা জমি জুড়ে বিস্তৃত এবং কুঁড়েঘরের মতো আকৃতির নয়টি জাদুঘর অন্তর্ভুক্ত। শিল্পগ্রামের এই ঐতিহ্যবাহী কুঁড়েঘরে ১০০০টিরও বেশি নিদর্শন রাখা আছে।
১১. অমর কুটির ইকো ট্যুরিজম পার্ক : বীরভূমের পরিবার-বান্ধব গন্তব্যগুলির মধ্যে একটি, অমর কুটির একটি মনোরম এবং শান্ত পরিবেশ সহ একটি দারুন ইকো-পার্ক। কোপাই নদীর তীরে অবস্থিত, পরিচ্ছন্ন ও সু-পরিচালিত পার্কটি প্রচুর সবুজ বনে ঘেরা। এখানে প্রচুর পার্কিং স্পেস রয়েছে, তাই আপনি সহজেই লং ড্রাইভের জন্য বের হয়ে পার্কে যেতে পারেন।পার্কটি প্রতিদিন সকাল ৮:০০ থেকে বিকেল ৫:০০ পর্যন্ত খোলা থাকে।
কীভাবে যাবেন - কলকাতা থেকে বীরভূমের দূরত্ব প্রায় ১৮৯ কিলোমিটার। শিয়ালদহ কিংবা হাওয়া থেকে বোলপুর কিংবা রামপুহাটে যাওয়ার ট্রেন পাওয়া যাবে। অন্যদিকে, ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বর্ধমান ও অজয় নদ পেরিয়ে গাড়িতেও পৌঁছে যাওয়া যায় বীরভূমে।
বীরভূমের অন্য়তম আকর্ষণ হল পৌষমেলা। প্রতি বছর ৭ পৌষ এই মেলা শুরু হয় এবং চলে তিন দিন ধরে। এই মেলার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল বাংলা লোকসংগীতের, বিশেষত বাউল গান অনুষ্ঠান।
তথ্য়সূত্র:
https://wbtourism.gov.in/destination/district/birbhum
আরও পড়ুন- কুয়াশা ঘেরা পাইন-বন, মনাস্ট্রির শান্তি, নয়নাভিরাম কাঞ্চনজঙ্ঘা, চলো Let's go কালিম্পং