ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, শিবাশিস মৌলিক ও সৌমিত্র রায়, কলকাতা : একসময় নকুলদানা বা চড়াম চড়াম ঢাকের আওয়াজের কথা বলতে শোনা যেত তাঁকে। খোদ DSP-কে দাঁড় করিয়ে একেবারে ঘড়ি ধরে হুঁশিয়ারি দেওয়ার সাহসও কেবল তিনিই রাখতেন। গোটা জেলায় তাঁর নামেই বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খেত। কিন্তু ১৮ মাস তিহাড়ে কাটানোর পর সেই তিনিই পুরো বদলে গিয়েছেন। হুমকি-হুঁশিয়ারির বদলে এখন সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলার কথা বলছেন। তিনি আর কেউ নন, বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা ও জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। 


সচিনের স্ট্রেটড্রাইভ, স্টেপআউট করে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ছক্কা বা ধোনির হেলিকপ্টার শটের মতোই, বঙ্গ রাজনীতির অন্যতম বর্ণময় চরিত্র, বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডলের USP-ই হচ্ছে তাঁর ডায়লগ। কখনও বিরোধীদের আক্রমণ, কখনও আবার পুলিশকে সময় বেঁধে দেওয়া। অনুব্রত মণ্ডল মানেই হুমকি-হুঁশিয়ারি-খেলা হবে-চড়াম চড়াম ঢাকা বাজানোর মতো ডায়লগ...স্টেজের এদিক থেকে ওদিকে মুখে আঙুল দিয়ে সবাইকে চুপ করার নির্দেশ....।

কিন্তু দীর্ঘ ১৮ মাসের বন্দিদশা কাটিয়ে বৃহস্পতিবার প্রথম প্রকাশ্য সভায় কেষ্ট মণ্ডল যা বললেন, তাতে আগের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া দায় ! তিনি বললেন, "আমি নেতা নই। আমার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আপনারা ফলো করুন। কোনও হানাহানি করবেন না। । কোনও ঝগড়াঝাটি করবেন না। সবাইকে নিয়ে চলুন। পাশে ডেকে নিন, কাছে টেনে নিন। তাতে ভাল হবে। দলটা আরও বৃদ্ধি পাবে। আরও উন্নয়ন হবে।"

এদিন তাঁর সভায় উপস্থিত ছিলেন না বীরভূমের বর্তমান জেলা সভাধিপতি কাজল শেখ। যার সঙ্গে অনুব্রতর সম্পর্ক কোনওদিনই মধুর নয়। কিন্তু সেই কাজল শেখ প্রসঙ্গেও উদার অনুব্রত। বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি বললেন, 'কোনও ঝগড়াঝাটি নয়। কার জন্য ঝগড়া করবেন? আমার জন্য? করতে হবে না। মন্ত্রীর জন্য? করতে হবে না। MLA-এর জন্য? করতে হবে না। আমি জানি না সভাধিপতি এসেছে কিনা। কাজল শেখ এসেছে? যাক আসতে পারেনি। যাক আসবে ঠিক আছে। এই মিটিংয়ে পারেনি, পরের মিটিংয়ে আসবে।'

অনুব্রত মণ্ডল কি তাহলে বদলে গেলেন? এ প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "ওখানে কেউ বলে দিয়েছে হয়তো....জেলের মধ্যে কানে কানে...বাড়াবাড়ি করো না। সেই কারণেই হতে পারে।"


সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "বাঘ...অনুব্রত মণ্ডল। বীরভূমের বাঘ। বিড়ালকে বাঘ বানিয়েছিলেন তৃণমূলের নেতারা। তিহাড় ঘুরে এসে বাঘ বিড়ালে পরিণত হয়েছে।"


নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা বলছেন, একজন যতই হোক, তিহাড় জেলে ছিলেন। ওরকম একটা পরিস্থিতিতে ছিলেন। সদ্য ফিরলেন। মেশিন তো নন...যে অন-অফ হয়ে যাবে। তাঁরওএকটা মানসকি-শারীরিক যন্ত্রণা...তিনি নিজে শরীরের কথা বলছিলেন। তিনি ফিরে এসেছেন তাঁর মাটিতে। উনি বিগত দিনগুলিতে কী বলেছেন, আগামী দিনগুলিতে কী বলবেন...এই সন্ত্রস্ত-বিরোধী দলগুলিকে দেখে আমার কষ্ট হয়। তিনি একজন দক্ষ সভাপতি। ওখানে একটা কোর কমিটিও রয়েছে। কোর কমিটিতে দক্ষ মন্ত্রীরা-সহ বিধায়করা রয়েছেন। বীরভূম অত্যন্ত সুন্দর জায়গা। 


এদিন কার্যত অনুব্রত মণ্ডলের সামনেই ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর কর্মী সমর্থক। মুরারইয়ের ২ নম্বর ব্লকের পাইকরে আবার অনুব্রত মণ্ডল মঞ্চে থাকার সময়ই মঞ্চ হঠাৎ একদিকে হেলে যায়। নিরাপত্তারক্ষী ও দলীয় কর্মীরা এসে কোনওরকমে সামাল দেন। অনুব্রত মণ্ডলকে নামিয়ে আনা হয় মঞ্চ থেকে।