হাওড়া: বগটুইয়ের ঘটনায় এখনও সরগরম বঙ্গ রাজনীতি।  তা নিয়ে শিলিগুড়ি থেকে বিরোধীদের যখন নিশানা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee), ঠিক সেই সময়ই হাওড়া থেকে তৃণমূলনেত্রীকে একহাত নিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury)। তাতে বগটুইয়ের হত্যাকাণ্ড (Rampurhat Fire) থেকে বেকারত্ব, সব প্রসঙ্গই ছুঁয়ে গেলেন তিনি। বাংলায় বেঁচে থাকতে চাকরি মেলে না, চাকরি পেতে খুন হতে হয় বলে দাবি কটাক্ষ করেন অধীর। মমতার আমলে রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়েও তীব্র কটাক্ষ করেন।


হাওড়ার আনিস খান থেকে ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু এবং সর্বোপরি বগটুইয়ের ঘটনা, এ দিন একের পর এক ঘটনার কথা উঠে আসে অধীরের বক্তৃতায়। তিনি বলেন, “বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে মানুষের নেত্রী হয়েছিলেন। আজ আপ আপনার নেতৃত্বেই  বাংলায় সন্ত্রাস চলছে। অর্থাৎ সন্ত্রাসকে হাতিয়ার করে ক্ষমতায় টিকে রয়েছেন আপনি। একদিন সন্ত্রাসের মোকাবিলা করতে এসেছিলেন। আজ ক্ষমতায় থাকার জন্য সন্ত্রাসকে হাতিয়ার করছেন।”


উত্তরবঙ্গে হাওয়া খেতে গিয়েছেন অধীর


শিলিগুড়ি থেকে এ দিনই বিরোধীদের নিশানা করেন মমতা। বগটুইয়ে গুলি এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তৃণমূলেরই লোক মারা গিয়েছেন। তার পরেও বিরোধীরা অযথা তাঁকে আক্রমণ করে চলেছেন বলে দাবি করেন মমতা। কিন্তু অধীরের বক্তব্য, “বীরভূমের ঘটনায় একটা জিনিস পরিষ্কার, দিদিল মাথায় অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ানো দরকার। তাই বাংলা যখন জ্বলছে, অক্সিজেন বাড়াতে উত্তরবঙ্গে হাওয়া খেতে গিয়েছেন।  আমাদের অভিযোগ যদি ভুল হয়, মানুষ শাস্তি দেবেন। বিধানসভা নির্বাচনে হেরেছি আমরা। হার-জিত বড় কথা নয়। হেরেছি বলে স্বীকারও করেছি। কংগ্রেস হারবে, কিন্তু হারিয়ে যাবে না। হারলেও মানুষের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাব।”


বাংলায় চাকরি পেতে আগে খুন হতে হয়


বেকারত্বের প্রশ্নও মমতাকে তীব্র আক্রমণ করেন অধীর। তিনি বলেন, “চাকরির জন্য মাসের পর মাস আন্দোলন করে চলেছে ছেলেরা। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরি নেই। কারণ তারা তৃণমূলের দাসত্ব করে না। বাংলায় চাকরি কখন হয়! আগে আপনাকে খুন হতে হবে, আপনার পরিবারকে আগুনে ফেলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, পুলিশ আপনাকে গুলি করে মারবে। তার পর চাকরি দিতে আপনার ঘরে হাজির হবেন দিদির লোকেরা। আপনার চাকরি পেতে পরিবারের কাউকে খুন হতে হবে আগে। জ্বলে-পুড়ে মরতে হবে পরিবারকে। তার পর দিদি বলবেন, ‘এসো চাকরি নাও’।”


আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: ' উন্নাওতে একটা মেয়েকে জ্বালিয়ে দেওয়া হল, কী বিচার হয়েছে? প্রশ্ন মমতার


বগটুইয়ের ঘটনার পর রাজ্যে বেআইনি অস্তর উদ্ধারে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। কিন্তু অধীরের দাবি, বাংলায় বোমা, অস্ত্রশস্ত্র নিয়েই ভোট হয়। তিনি বলেন, “পুলিশ, বোম, অস্ত্র নিয়ে পঞ্চায়েত-পুরভোট হচ্ছে বাংলায়। তপন কান্দু খুন হলেন, কারণ তৃণমূলকে ঝালদায় বোর্ড গড়তে হবে। পানিহাটিতে অনুপম দত্তকে খুন করা হল বোর্ড গঠন করার জন্য। আনিস খানের পরিবার এখনও বিচার পায়নি। এনআরসি নিয়ে ভোট ভাগাভাগি মোদি আর দিদির। আনিস এনআরসি নিয়ে প্রতিবাদ করেছিল। ভোট হয়ে গিয়েছে, আর এনআরসি নিয়ে কথা নেই দিদির মুখে। দিদি-মোদির গটআপ গেমে বাংলায় ভোট হয়েছে। এনআরসি নিয়ে ভোট ভাগাভাগি মোদি আর দিদির। এনআরসি এখন ঘুমোচ্ছে, আবার জাগবে ২০২৪-এ। দিদি-মোদি এভাবেই বাংলার রাজনীতিতে ভাগ বসিয়েছে।“


বগটুইয়ের ঘটনায় সম্প্রতি দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তৃণমূলের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। তাতেও তৃণমূল-বিজেপি সংযোগের অভিযোগ এনেছেন অধীর। তাঁর দাবি, “আমরা যখন রামপুরহাট নিয়ে সিবিআই চাইছি, তখন দিদির দলের লোক অমিত শাহর কাছে চলে যাচ্ছে।“