সিউড়ি: বিনা ভোটে পুরসভা দখল নিয়ে দলের অন্দরেই মতান্তর শুরু হয়েছে। তার মধ্যেই সাঁইথিয়ার পর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বীরভূমের (Birbhum News) সিউড়ি (Suri Municipal Corporation) পুরসভাও দখল করল তৃণমূল (TMC)। শুক্রবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের প্রথম দিনেই বিরোধী শিবিরের প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। বিজেপি (BJP), বাম (CPM) ও কংগ্রেস (Congress), সব দলের প্রার্থীরাই মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। তাতেই পুরসভার দখল ওঠে তৃণমূলের হাতে। আগেই সিউড়ির একটি ওয়ার্ড বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করেছিল তৃণমূল। এ দিন ১৪টি ওয়ার্ডে বিরোধীদের প্রার্থীপদ প্রত্যাহারে সিউড়ি পুরসভা দখল শাসক দলের। ২১টি ওয়ার্ডের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫টি ওয়ার্ড দখল তৃণমূল কংগ্রেসের।


পুরসভা নির্বাচনের আগে, সম্প্রতি একে একে সাঁইথিয়া, বজবজ দিনহাটা পৌরসভার দখল নেয় তৃণমূল। বিরোধী দলগুলি প্রার্থী দিতে না পারাতেই, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জোড়াফুল শিবিরের হাতে পৌরসভার দখল উঠেছে বলে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে দাবি করেন দলের নেতারা। সেই নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে বৃহস্পতিবার কমিশনে গিয়ে অভিযোগও দায়ের করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। তার মধ্যেই শুক্রবার ফের সিউড়ির দখল নিল জোড়াফুল শিবির।


যদিও বিনাযুদ্ধে পুরসভা দখল নেওয়ার বিরুদ্ধে তৃণমূলের অন্দরেই দ্বিমত দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার দলের যুব সংগঠনের নেতা তথা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত দেবাংশু ভট্টাচার্য। ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি লেখেন, ‘ব্যক্তিগত স্বার্থে কিছু মানুষ ভোটে অশান্তি করেন। তাই স্থানীয় ভোটে অশান্তি বেশি হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশকে ১০০ শতাংশ স্বাধীনতা দিতে হবে।  প্রয়োজনে বিধানসভার দ্বিগুণ সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানো হোক। আরেকবার ২০১৮ হলে আরেকটি ২০১৯ কিন্তু সময়ের অপেক্ষা। বার বার সবটা ২০২১- এর মতো হবে না। তার পর হাতজোড় করে বাড়ি বাড়ি ঘুরলেও মানুষ কিন্তু ক্ষমা করবেন না। যাঁরা অশান্তি করেন, ভবিষ্যতে তাঁরা অনায়াসে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সেটিং করে নিতে পারবেন। তখন মার খেতে হবে কর্মীদের। মরতে হবে সাধারণ সদস্যদের। কিছু স্বার্থান্বেষী বদমায়েশের জন্য দলের মুখে কালি লাগতে দেবেন না। একজন অতি সাধারণ কর্মী হিসেবে অনুরোধ রইল।”


আরও পড়ুন: Chandrima on I-PAC: 'না জানিয়েই আমার নামে সোশাল মিডিয়া পোস্ট করেছে I-PAC', বিস্ফোরক চন্দ্রিমা


দেবাংশুর এই পোস্ট ঘিরে দলের অন্দরে নতুন করে বিরোধ দেখা দিয়েছে। স্নেহ করলেও, দেবাংশুর মন্তব্য সমর্থনযোগ্য নয় বলেন জানিয়ে দেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তৃণমূল কোনও ভাবেই সন্ত্রাসকে সমর্থন করে না বলে মন্তব্য করেন ফিরহাদ।


যদিও এ নিয়ে কোচবিহারের বিধায়ক উদয়ন গুহ। তাঁর নেতৃত্বেই দিনহাটায় বিরোধীদের মনমোনয়নপত্র জমা দিতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। কিব্তু উদয়নের বক্তব্য, “দলের অন্দরে যাঁরা সমালোচনা করছেন, তাঁরা পরশ্রীকাতর।তাঁরা দিনহাটাকে হিংসা করছেন।নাটাবাড়ি বিধানসভায় ৩টি জেলা পরিষদ আসনে দেড় লক্ষ ভোটে জেতে তৃণমূল। তখন প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা, আর বাকি ভোটগুলিতে গ্রহণযোগ্যতা ছিল না ? নিজে আগে আয়নার সামনে দাঁড়ান, তারপর বলবেন।”


নাম না করে রবীন্দ্রনাথ ঘোষকেও আক্রমণ করেন উদয়ন। বলেন, “উনি নিজের চরকায় তেল দিন। আমরা মমতার মডেলেই চলি।” যদিও তাঁকে পাল্টা আক্রমণ করেন কোচবিহার তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সহ সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বলেন, “দলের মত নয়, উদয়নবাবুর ব্যক্তিগত মত।”