এরশাদ আলম ও নান্টু পাল, বীরভূম: দ্রুত পরিবেশ দফতরের ছাড়পত্র চাই। সেই দাবিতেই অনির্দিষ্টকালের জন্য বীরভূমের (Birbhum) সমস্ত পাথর খাদান ও ক্রাশারের ঝাঁপ বন্ধ করে দিল মালিক পক্ষ। এর ফলে পুজোর আগে চরম বিপদে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক। খাদান ও ক্রাশার বন্ধের জেরে প্রায় ১ লক্ষ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়বেন বলে দাবি।


বৈধ খাদান-অবৈধ খাদান:
সূত্রের খবর, গোটা বীরভূম জেলায় রয়েছে ২১৭টি পাথর খাদান। যার মধ্যে মোট ৬টি খাদানের পরিবেশ দফতরের ছাড়পত্র রয়েছে। যার মধ্যে ১টি সরকারি খাদান এবং ৫টি বেসরকারি খাদান। বাকি ২১১ টি খাদান অবৈধ বলেই সূত্রের খবর। 


বন্ধের আবেদন:
২০১৫ সালে, এই অবৈধ খাদানগুলি বন্ধ করার আবেদন জানিয়ে গ্রিন ট্রাইবুনালের (Green Tribunal) দ্বারস্থ হন, রামচন্দ্র মাড্ডি নামে এক ব্যক্তি। যে খাদানগুলির Environment Clearance Certificate বা পরিবেশ দফতরের ছাড়পত্র নেই, সেগুলি বন্ধের নির্দেশ দেয় গ্রিন ট্রাইবুনাল। কিন্তু তারপরেও বন্ধ হয়নি খাদান। বর্তমানে, এই খাদান মালিকদের দাবি, তাঁদেরও Environment Clearance Certificate দিতে হবে। নয়তো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হবে খাদান। 


ক্ষুব্ধ খাদান মালিকরা:  
বীরভূম জেলা পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নাজির হোসেন মল্লিক বলেন, '৬টি বৈধ। বাকি সব অবৈধ। সরকারকে জরিমানা দিয়েছি। তাও চোর বদনাম। আগে ইসি সার্টিফিকেট পাব। তারপর কাজ হবে।' ছাড়পত্র না থাকা একটি পাথর খাদানের মালিক শেখ আজাদ আলি বলেন, 'গ্রিন ট্রাইবুনাল থেকে নোটিস দেয়। কিন্তু সরকারকে জরিমানা দিয়েও কাজ চলত। এখন আর এভাবে ব্যবসা করব না।' আর এই অবৈধ খাদান মালিকদের সমর্থন জানিয়ে, খাদান বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছে, বাকি ৬ বৈধ খাদান মালিক কর্তৃপক্ষও। এর ফলে বীরভূমে স্তব্ধ খাদান ও ক্রাশার-কারবার। মহম্মদবাজারের পাঁচামী পাথর শিল্পাঞ্চল থেকে মল্লারপুর, রামপুরহাট, নলহাটি, মুরারই সহ বিস্তীর্ণ এলাকার পাথর খাদান ও ক্রাশারের ঝাঁপ বন্ধ হয়েছে। রামপুরহাট ক্রাশার খাদার সমিতির সেক্রেটারি মুস্তাক আহমেদ বলেন, 'আমাদের বৈধ কাগজ দিচ্ছে না। তাই শুনতে হচ্ছে পাথর মাফিয়া। তাই কাজ বন্ধ রেখেছি।' পাঁচামি মাইনস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সৈয়দ ফজলে হক বলেন, 'পুজোর আগে বন্ধ হয়ে গেল। ১ লক্ষ মানুষ কাজ হারাল। এই কাজের সঙ্গে প্রচুর গাড়ি ব্যবসায়ীও যুক্ত রয়েছেন।' ফলে এর জেরে শুধু যে ১ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছেন তা-ই নয়, এই পেশার সঙ্গে পরোক্ষভাবে যুক্ত সকলেই, যেমন গাড়ির মালিক, গাড়ি ব্যবসায়ী, খালাসি-এরকম কয়েক হাজার মানুষেরও রুটিরুজিতে টান পড়বে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। 


উদ্বেগে শ্রমিকরা:
প্রবল উদ্বেগে পড়েছেন পাথর খাদানে কাজ করা শ্রমিকরা। এমনই এক কর্মী বৌদ্ধেশ্বর দাস বলেন, 'পুজোর মুখে বন্ধ। বাচ্চাদের নতুন জামা-কাপড়ও দিতে পারব না।'


কী বলছে প্রশাসন:
বীরভূমে খাদান বন্ধ হওয়ায় পুজোর মুখে কাজ হারালেন অসংখ্য ব্যক্তি। এই নিয়ে এখনও কোনও বক্তব্য রাখেনি প্রশাসন। বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, 'এ ব্যাপারে যা বলার জেলাশাসক বলবেন।' যদিও এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি জেলা শাসক।