ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর : এবার সমাবর্তন রাজনীতিতে তেতে উঠল বিশ্বভারতী (Visva Bharati University)। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং (Rajnath Singh) যেদিন প্রধান অতিথি হিসেবে সমাবর্তনে উপস্থিত, আমন্ত্রণ পেয়েও সেদিন সমাবর্তনে গেলেন না তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় (Sudip Banerjee)। বিশ্বভারতীর উপাচার্যর কাজকর্ম নিয়ে দিল্লিতে সুর চড়ানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। পাল্টা জবাব দিয়েছে বিজেপি। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। 


সমাবর্তনেও রাজনীতি পিছু ছাড়ল না বিশ্বভারতীর। এদিনও ক্যাম্পাসের বাইরে রতনপল্লি এলাকায় দেখা গেল উপাচার্য বিরোধী পোস্টার। প্রধান অতিথি হিসেবে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে হাজির ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার। আর আমন্ত্রণ পেয়েও বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে গেলেন না তৃণমূল সাংসদ ও বিশ্বভারতী কোর্টের কোর কমিটির সদস্য সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। বীরভূমে গিয়েও শান্তিনিকেতনমুখো হননি তৃণমূল সাংসদ। স্ত্রী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে এদিন তারাপীঠের মন্দিরে পুজো দেন তিনি।


রাজনৈতিক তরজা-


বিশ্বভারতী কোর্ট কোর কমিটির সদস্য ও তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেন, আমি বিশ্বভারতীর কোর্টে লোকসভার স্পিকারের দ্বারা ৩ বছরেরও অধিককাল আছি। এই উপাচার্য কখনও আমন্ত্রণ জানানোর প্রয়োজন বোধ করেননি। আজকের সমাবর্তনের খবর দিয়েছেন মাত্র ৭২ ঘণ্টা আগে মেল করে। আমিও জবাব দিয়েছি, এটা অপ্রত্য়াশিত, অভাবনীয়, অনুচিত। আপনি একাজ করতে পারেন না। আপনার মনে রাখা উচিত, আমি লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা।


বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, ৭২ ঘণ্টার আগে জানানোর পরেও যদি উনি মনে করেন ওঁকে ঠিক সময় জানানো হয়নি, তাহলে এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়। বীরভূমের মানুষ সবাই জানেন। সুতরাং, হাওয়া গরম করে লাভ নেই।

বিতর্ক যে এখানেই শেষ হচ্ছে না, বরং জল যে দিল্লি পর্যন্ত গড়াবে, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় তার ইঙ্গিত মিলেছে। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেন, এই উপাচার্য মুখ্যমন্ত্রীকে মানেন না। অমর্ত্য সেনকে অপমান করেন। আমাদের মতো সদস্যকে কোন হিসাবে গুরুত্ব দেবেন? কিন্তু এই উপাচার্যকেও আমি ছাড়ব না। ১৩ তারিখ লোকসভা খুলছে। স্পিকারের কাছে জানতে চাইব, আপনার অধিকারকেও উনি পরোক্ষভাবে চ্যালেঞ্জ করছেন। দরকার হলে নরেন্দ্র মোদিকেও বলব হাউসে দাঁড়িয়ে, যে বিশ্বভারতীর উপাচার্য যে কাজ করছেন, সে সম্পর্কে আপনাদের পদক্ষেপ করতে হবে।


বিশ্বভারতীর আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, এখনকার উপাচার্য প্রাক্তনী, আশ্রমিকদের পছন্দ করেন না। সহ্য করতে পারেন না। উনি যতদিন থাকবেন, কোনও দিন ডাকবেনও না। এতে আশ্চর্য হওয়ার নেই। বিশ্বভারতীতে রাজনীতি ছিল না। এবার ঢুকবে।

যাবতীয় অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়ার জন্য বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিককে ফোন করা হলে, তিনি ফোন ধরেননি। অমর্ত্য সেনের সঙ্গে জমি বিবাদ ইস্যুতে নবান্ন-বিশ্বভারতী সংঘাত চরমে। শান্তিনিকেতনে গিয়ে বিশ্বভারতীর উপাচার্যের কাজের সমালোচনা করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। তার পাল্টা জবাব দেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তীও। সমাবর্তন ঘিরেও জারি রইল সেই সংঘাত।


আরও পড়ুন ; 'বাংলার পুনর্জাগরণের প্রয়োজন', বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে এসে বললেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ