ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, লাভপুর (বীরভূম) : কুয়ে নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে লাভপুরের প্রায় ১৫টি গ্রাম । চারিদিকে শুধু জল আর জল। এই পরিস্থিতিতে এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে বিপদে পড়লেন দুই সাংসদ, বিধায়ক ও জেলাশাসক-সহ ১৩ জন।


লাভপুরে বন্যার পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে গিয়ে বড় দুর্ঘটনার কবলে পড়লেন তাঁরা। প্রত্যেকে জলে পড়ে যান। পরে তাঁদের স্থানীয় বাসিন্দারা এবং পুলিশ উদ্ধার করে। এঁরা কেউ সেফটি জ্যাকেট পরেননি। যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 


কুয়ে নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে লাভপুরের প্রায় ১৫টি গ্রাম। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার লাভপুরের প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনে যান বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায়, পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়, তৃণমূল সাংসদ সামিরুল ইসলাম, তৃণমূল সাংসদ অসিত মাল, লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক অভিজিৎ সিনহা সহ মোট ১৩ জন । পরিদর্শনের সময় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন গ্রামগুলিতে পৌঁছাতে তাঁরা একটি স্পিডবোটে কুয়ে নদী অতিক্রম করছিলেন। কিন্তু আচমকাই স্পিডবোটটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। বোটে থাকা সকলেই নদীতে পড়ে যান। পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বাদে জেলাশাসক বিধান রায় সহ বাকিরা জলে পড়ে যান।


নিম্নচাপের জেরে গত কয়েকদিন ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। তার জেরে মাইথন ও পাঞ্চেত জলধার থেকে DVC-র ছাড়া জলে প্লাবিত বাংলার একাধিক জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। এক নাগাড়ে বৃষ্টি ও DVC-র ছাড়া জলে দক্ষিণবঙ্গের সাত জেলায় বন্য়া পরিস্থিতি। জল ছাড়ার জেরে ভাসছে দুই মেদিনীপুর, দুই বর্ধমান,  হুগলি, হাওড়া, বাঁকুড়ার একাংশ। গ্রামের পর গ্রামে জমি, বাড়ি জলের তলায়। ডিভিসির ছাড়া জলে নিম্ন দামোদর উপত্যকার একাধিক এলাকায় প্লাবনের আশঙ্কা। যেদিকে চোখ যায় শুধুই জল আর জল। জলমগ্ন ঘর-বাড়ি। বিঘার পর বিঘা চাষের জমি জলের তলায়। 


পুজোর মুখে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি। DVC-র ছাড়া জলে ভাসছে কুরচি শিবপুর, কানুপাট-মনশুকা এবং সিংটি-শিবানীপুর, এই ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৬-১৮টি গ্রাম।উদয়নারায়ণপুর- ডিহিভুরসুট রাজ্য সড়কের ওপর দিয়ে জল বইছে। বাড়ি, দোকানপাট, চাষের জমি জলমগ্ন। হাঁটু জল পেরিয়ে যাতায়াত করছেন উদয়নারায়ণপুর থানার পুলিশ কর্মীরা। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় গতকাল পূর্তমন্ত্রী পুলক রায় ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন উদয়নারায়ণপুর ও আমতার দুই তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজা ও সুকান্ত পাল। দুর্গত এলাকা থেকে দেড় হাজারের বেশি মানুষকে উদয়নারায়ণপুরের ফ্লাড সেন্টারে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে শুকনো খাবার, পানীয় জল। জোরকদমে চলছে উদ্ধারকাজ।  


DVC জল ছাড়ায় বাঁকুড়ার সোনামুখী ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রাধামোহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর নিত্যানন্দপুর, সমিতিমানা, পাণ্ডে পাড়া, ডিহিপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের রাঙামাটি, কেনেটিমানা-সহ একাধিক এলাকা জলমগ্ন।কোথাও কোথাও কোমর সমান জল। ভেলায় করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বেশ কিছু মানুষকে আনা হয়েছে রিলিফ সেন্টারে। বন্য়া পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। দুর্গাপুর ব্যারাজ সংলগ্ন বাঁকুড়ার একাধিক গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়ায়, আজ পরিদর্শনে যান মন্ত্রী মলয় ঘটক।