প্রকাশ সিনহা, আবীর দত্ত: কোটি কোটি টাকা অ্যাকাউন্টে (bank account) জমা পড়েছে! অথচ হিসাব নেই! জমি (land) কেনা হয়েছে অনেক। কিন্তু, সে সম্পর্কেও সঠিক তথ্য নেই। এমনই সব গুরুতর অভিযোগে অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal) কন্যা সুকন্যা মণ্ডলকে (Sukanya Mondal) গ্রেফতার করল ইডি। সূত্রের দাবি, গোয়েন্দাদের প্রশ্নের মুখে তথ্য এড়িয়ে যাচ্ছিলেন সুকন্যা। তদন্তকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছিলেন তিনি। তাই সুকন্যা মণ্ডলকে গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।


নজরে সুকন্যার সম্পত্তি


বাবার পর এবার মেয়ে। ED-র হাতে এবার গ্রেফতার হলেন অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে সুকন্যা। গরু পাচার মামলায়, দিল্লিতে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পর এদিন সুকন্যা মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়। 

অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর, ২ বার, ED-র হাজিরা এড়ান অনুব্রত কন্য়া সুকন্য়া মণ্ডল। ED সূত্রে দাবি, অনুব্রত মণ্ডল ও তাঁর পরিবারের সদস্য়দের বিভিন্ন অ্য়াকাউন্টে, বিভিন্ন সময়ে মোট ২০ কোটি টাকা নগদ জমা পড়েছিল। ২০১৬ থেকে ২০২০, এই ৫ বছরে বোলপুর এবং তার আশপাশের ব্যাঙ্কে জমা পড়েছে ২০ কোটি নগদ টাকা। ED সূত্রে দাবি, সুব্রত বিশ্বাস নামে প্রাক্তন এক ব্য়াঙ্ককর্মী বয়ান দিয়েছেন, বিভিন্ন সময়ে অনুব্রত মণ্ডল, বাড়িতে ডেকে বা চালকের হাত দিয়ে টাকা পাঠাতেন। প্রায় ৬ কোটি টাকা নগদ পাঠিয়ে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে জমা করতে বলা হয়েছিল। ED সূত্রে খবর, এর মধ্যে রয়েছে একাধিক রাইস মিল ও বিভিন্ন ভুয়ো কোম্পানির অ্যাকাউন্টও। জমা টাকার মধ্যে ৩ কোটি টাকা সুকন্যার নামে এফডি করা হয়েছে বলে ED সূত্রে দাবি।

ইডি সূত্রের দাবি, অনুব্রত মণ্ডলের নামে ২৪টি, তাঁর মেয়ে সুকন্যার নামে ২৬টি, প্রয়াত স্ত্রী ছবি মণ্ডলের নামে ৬টি সম্পত্তির হদিশ পাওয়া গেছে। এর আগে, অনুব্রত মণ্ডলের চার্টার্ড অ্য়াকাউন্ট্যান্ট মণীশ কোঠারি, প্রাক্তন দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকে গ্রেফতার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। সূত্রের খবর, ANM অ্যাগ্রোকেম ফুড প্রাইভেট লিমিটেডের অন্যতম ডিরেক্টর সুকন্যা মণ্ডল। মিনিস্ট্রি অফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে এই সংস্থাটি তৈরি হয়। সেই সময় সংস্থার শেয়ার ক্যাপিটাল ছিল ১ কোটি টাকা। সংস্থার দ্বিতীয় ডিরেক্টর বিদ্যুৎবরণ গায়েন। বোলপুরের কালিকাপুরের হারাধন মণ্ডল রোডে যে ঠিকানায় এই কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে, সেটা হল ভোলে বোম রাইস মিলের।

CBI সূত্রে দাবি, এই রাইস মিলের মালিক মণ্ডল পরিবার। এটা ছাড়াও, সুকন্যার নামে আরও ১০টি জমির ডিড বা চুক্তিপত্র পাওয়া গেছে। সূত্রের দাবি, এই সম্পত্তিগুলির মধ্যে ৩টি কেনা হয়েছে ভোলে বোম রাইস মিলের নামে। যেখানে সুকন্যাকে পার্টনার হিসাবে দেখানো হয়েছে। অনুব্রত মণ্ডলের পাড়া বোলপুরের নিচুপট্টি এলাকায় এই ১০টি জমি কেনা হয়েছে ২০১৪ থেকে ২০১৬’র মধ্যে। 


CBI সূত্রে দাবি, ২০১৪ সালের ৩০ অক্টোবর একটি জমি কেনা হয়েছিল। দ্বিতীয় জমিটি কেনা হয়, এর পরের দিন অর্থাৎ ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর। এরপর ২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর তৃতীয় জমি কেনা হয়। ওই দিনই কেনা হয়েছে চতুর্থ জমিটিও। এর চার দিন পর, ২০১৪ সালের ৭ নভেম্বর কেনা হয়েছে পঞ্চম জমি। ষষ্ঠ জমি ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর কেনা হয়েছে। এর পরের জমি কেনা হয়েছে ২০১৪-র ১৭ নভেম্বর। অষ্টম জমিও কেনা হয়েছে ২০১৪-রই ১৭ নভেম্বর। নবম জমি কেনা হয়েছে, দু’দিন পর। সপ্তম-অষ্টম এবং নবম জমিগুলি কেনা হয়েছে ভোলে বোম রাইস মিলের নামে। দশম জমি কেনা হয়েছে, ২০ জুলাই ২০১৬ সালে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই ১০টি জমির মধ্যে ৭টি জমি হস্তান্তর হয়েছে একই দিনে। ২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর।

ED-সূত্রে দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য এড়িয়ে যাচ্ছিলেন সুকন্যা। তদন্তকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছিলেন তিনি। এর জন্যই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।