গোপাল চট্টোপাধ্যায়, রামপুরহাট: বহুকাল আগে অসুস্থতা এবং ব্যবসার মন্দা কাটাতে দেবী দুর্গার শরণাপন্ন হন দুই ভাই। তাঁরা বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করেন। এরপরেই তাঁদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি শুরু হয়, ব্যবসায় মন্দাও কেটে যায়। সেই থেকেই বাড়িতে হয়ে আসছে দুর্গাপুজো। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। এখন পরিবারের সদস্যরা পালা করে পুজো করে করেন। বীরভূমের রামপুরহাট পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের শিবতলা অঞ্চলের মণ্ডল বাড়িতে এবারও পুজোর প্রস্তুতি চলছে।


এই পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, পুজোর সঠিক দিনক্ষণ এখন আর কারও জানা নেই। তবে পরিবারের হিসেব অনুযায়ী, এবার তাঁদের পুজোর ৩০৪ বছর।  তাঁদের মনে আছে পুজো ১১ পুরুষ ধরে হয়ে আসছে।


মণ্ডল পরিবারের কর্তারা জানিয়েছেন, পুজো শুরু করেন দুই ভাই মধুসূদন মণ্ডল ও সূর্যকান্ত মণ্ডল। কোনও এক বছর ব্যবসায় মন্দা গিয়েছিল মণ্ডল পরিবারের। শারীরিক অবস্থাও ভাল যাচ্ছিল না দুই ভাইয়ের। নিজেদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি এবং ব্যবসায় মন্দাদশা কাটাতে পুজো শুরু করেছিলেন তাঁরা। পুজোর পরেই তাঁদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়। মন্দা দশা কাটে ব্যবসায়। সেই থেকে আজও বহু ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করে পুজো হয়ে আসছে মণ্ডল বাড়িতে। এখন পরিবারের সদস্যরা পালা করে পুজো করেন।


মণ্ডল পরিবারের সদস্যরা আরও জানিয়ছেন, পুজো শুরু করার আগে মধুসূদন ও সূর্যকান্ত মুদিখানার ব্যবসা করতেন। তাঁদের জমিদারিও ছিল এলাকায়। তাঁরা মূলত মুদিখানার জিনিসপত্র আমদানি-রফতানি করতেন। একসময় তাঁদের ব্যবসায় মন্দা শুরু হয়। একইসঙ্গে তাঁদের শারীরিক অবস্থাও ভাল যাচ্ছিল না। তখনই স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুজো শুরু করেন মধুসূদন। পুজো শুরু করতেই ধীরে ধীরে ব্যবসায় মন্দা দশা কেটে গিয়ে উন্নতি হতে শুরু করে। শারীরিক দিক থেকেও তাঁরা সুস্থ হতে শুরু করেন। তবে খুব বেশিদিন পুজো চালিয়ে যেতে পারেননি মধুসূদন। কারণ, পুজো শুরুর কয়েক বছর পর দশমী পুজোর দিন প্রণাম করতে গিয়ে আবেগের বশে ঘট জড়িয়ে ধরে মারা যান মধুসূদন। তারপরই পুজোর হাল ধরেন ভাই সূর্যকান্ত।


সেই সময় সামিয়ানা টাঙিয়ে পুজো করা হত। নবমীর দিন ভোগ খাওয়ানো হত এলাকার সকলকে। দশমীর বিকেলে শহরের চালধোয়ানী পুকুরে ধান-চালের সারা বছরের দরদাম করা হত। তারপরই শঙ্খচিল দেখে ঢাক বাজিয়ে গরু ছোটানো হতো। এখনও সেই রীতি বজায় রয়েছে। তবে আকাশে আর শঙ্খচিল দেখা যায় না। মাথার উপর যে কোনও পাখিকে উড়তে দেখলেই তাকেই শঙ্খচিল ধরে নিয়ে ঢাক বাজিয়ে দেওয়া হয়। শুরু হয় আতসবাজি পোড়ানো। ঢাক ও আতাস বাজির শব্দে প্রাণপনে ছুটতে থাকে গরু। তবে আগের মতো গরু আর আসে না। ঢাকিদের আগে পুরস্কৃত করা হলেও এখন সে সব অতীত।