গোপাল চট্টোপাধ্যায়, খয়রাশোল: রাজ্যের অন্যান্য় প্রান্তের মতো বীরভূমের খয়রাশোল থানা এলাকার পাথরকুচি গ্ৰামেও চলছে আসন্ন দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি। এই গ্রামের আকর্ষণ কবিরাজ ও মন্ডল পরিবারের ‘সাত মা’-র পুজো। আনুমানিক প্রায় তিনশো বছরের পুরনো এই পুজো। গ্ৰামে এই পুজোকে ঘিরেই যত উদ্দীপনা ও আনন্দ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, কবিরাজ ও মন্ডল পরিবারের প্রথমে দুটি পুজো থাকলেও, বংশবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কালক্রমে পুজোর সংখ্যাও বেড়েছে। পরপর সাতটি মন্দির আছে, প্রতিটি মন্দিরেই আছে মাটির প্রতিমা।
যাবতীয় আচার-বিধি মেনেই এখানে দুর্গাপুজো হয়। সপ্তমীর সকালে নির্ঘণ্ট মেনে আটটি পালকি ও ১৬ টি ঘট নিয়ে দোলা আনতে যাওয়া বা নবপত্রিকা স্নানের যাত্রায় সামিল হন পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন সহ গ্ৰামের বাসিন্দারা। অষ্টমীতে প্রতিটি মন্দিরে শ্বেত ছাগ বলি দেওয়া হয়। দু’টি মন্দিরে কুমারী পুজো হয়ে থাকে। দশমীতে দোলা বিসর্জন এবং একটি মন্দিরের প্রতিমা নিরঞ্জন করা হলেও, একাদশীর দিন বাকি ৬টি মন্দিরের প্রতিমা বিসর্জন করা হয়।
কবিরাজ ও মন্ডল পরিবারের আত্মীয়স্বজনরা সকলেই আসেন এই পুজোয়। চারদিন একসঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠেন সকলেই। গ্ৰামবাসীরা এই চার দিন নিজেরাই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে থাকেন। তবে করোনা পরিস্থিতির জন্য গত বছর থেকে অনুষ্ঠানে কাটছাঁট করা হয়েছে। যদিও পুজোর আনন্দ তাতে বিন্দুমাত্র ম্লান হয়নি।
করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার মধ্যেই এসে পড়েছে বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো। এই পরিস্থিতিতে পুজো কীভাবে হবে, তা ঠিক করতে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও কমিশনারদের নিয়ে নবান্ন থেকে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। কোভিড বিধি মেনে পুজো করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরেই বৈঠকে মুখ্যসচিব নির্দেশ দিয়েছেন, তিন দিক খোলা মণ্ডপে করতে হবে। গত বছরের মতোই এবারও পুজোর গাইডলাইন বলবত্ থাকবে। মাস্ক পরা-সহ মানতে হবে কোভিড বিধি।
করোনা আবহেই দুর্গাপুজো হয়েছিল গত বছর। এ বছর করোনা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে, চলছে টিকাকরণ। এই পরিস্থিতিতে এবার পুজোয় লোক বেশি বের হবে ধরে নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, পুজোয় মাস্ক পরা নিয়ে সচেতনতা প্রচারের নির্দেশও দেওয়া হয় পুলিশকে। করোনা বিধি মেনে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে ক্লাবগুলির সঙ্গে সমন্বয় করবে পুলিশ ও প্রশাসন।