ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বীরভূম: কয়েন দিয়ে যায় কেনা! লক্ষাধিক টাকা মূল্যের মোটরবাইক কিনতে গিয়ে দশ টাকার কয়েনে দাম দিলেন বীরভূমের (Birbhum News) তাপস লেট (Bike Purchased With Saved Up Coins)। তাপসের দেওয়া দশ টাকার কয়েন গুনতে প্রায় এক বেলা সময় লেগে গিয়েছিল মোটরবাইকের শো-রুমের কর্মীদের। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেন পেশায় লটারি ব্যবসায়ী। ধৈর্যের পরীক্ষা ছিল শো-রুম কর্মীদেরও। অবশেষে সকলেই পরীক্ষায় 'পাশ' করেছেন। প্রিয় বাইকটি হাতে পেয়েছেন তাপস।
শুরুর কথা...
লটারির টিকিট বিক্রি করে সংসার চালান বীরভূমের রামপুরহাট থানার চাকপাড়ার বাসিন্দা তাপস। দেখতেন, প্রত্যেক দিন লটারির দোকানে ১০ টাকা ও ৫ টাকার কয়েন দিয়েই টিকিট কিনছেন ক্রেতারা। সেই সব কয়েনই প্রচুর জমা পড়ত তাঁর কাছে। ইচ্ছাপূরণে তাই কয়েনই ভরসা করলেন তিনি। শুরু হল তিলে তিলে সঞ্চয়। তাঁর কথায়, 'এক বছর মতো সময় লেগেছিল।' বাস্তবিক। যে মোটরবাইকটি তাপস কিনেছেন, তাঁর দাম এক লক্ষ দুই হাজার টাকা। দশ টাকার কয়েনে ওই অঙ্কের অর্থ জমাতে সময় দিতেই হত তাঁকে। দিয়েছেন। সবুরে মেওয়া ফলেছেও। কিন্তু ঝক্কি হয় মল্লারপুরে মোটরবাইক শো রুমের কর্মীদের। তাপসের কথায়, 'প্রায় ২ ঘণ্টা কয়েন গুনতে সময় লেগেছিল ওঁদের।' কিন্তু মোটরবাইক কেন কিনতেই হত তাঁকে? লটারি ব্যবসায়ীর কথায়, 'বিভিন্ন কাজে যাওয়ার জন্য নানা সমস্যায় পড়তে হয়। সে জন্য একটা মোটরবাইক খুব দরকার ছিল। এদিকে অভাবের সংসারে টাকা জমানো হচ্ছিল না। বিভিন্ন সমস্যায় টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছিল। তাই দশ টাকার কয়েন জমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বছর খানেক আগে।' শেষমেশ পুজোর আগে মোটরবাইক কেনার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। দু'দিন আগেই তাঁর সাধের বাইকটি নিয়ে বাড়ি এসেছেন তাপস। একরকম যুদ্ধজয়ের হাসি তাঁর মুখে। মোটরবাইকের যে শোরুম থেকে তিনি সেটি কেনেন, তাঁর মালিক প্রদীপ্ত মণ্ডল বলেন, “প্রথমে ভেবেছিলাম এত টাকার কয়েন যদি ব্যাঙ্কে না নেয় তাহলে কী করব? কিন্তু উনি মাস তিনেক আগে ফোন করেন।'
অতঃপর...
ইচ্ছা থাকলেই যে উপায় হয়, সে কথা আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন রামপুরহাটের বাসিন্দা। এখন বলছেন, 'আমার খুব ভাল লাগছে, আনন্দ হচ্ছে। এত দিনের আশা পূরণ হল।' নিজের ধৈর্যের পাশাপাশি শো-রুম কর্মীদের ধৈর্যের কথাও জানিয়েছেন। কয়েন দিয়েও যে মোটরবাইক কেনা যায়, হাতেকলমে বুঝিয়ে দিলেন তাপস।
আরও পড়ুন:'মিগজাউম'-র ধাক্কায় কি এলোমেলো দক্ষিণবঙ্গে শীতের আমেজ? কেমন কাটবে আগামিকাল?