ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বীরভূম : 'কেউ খোঁজ রাখে না' - এক সময় আক্ষেপের সুর ঝরে পড়েছিল তাঁর গলায়। তাঁর গাওয়া গান অন্য শিল্পীরা গেয়ে চার্টবাস্টার হিটের তালিকায় জায়গা করে নিয়ে। তাঁর গানে মিশেছে ব়্যাপ। হয়েছে রিমিক্স। কিন্তু গানের স্রষ্টা কে, অনেকেই জানেন না আজও। এবার সেই 'বড়লোকের বিটি লো'-র জন্মদাতা রতন কাহারের (Bhadu folk singer and writer Ratan Kahar ) নাম পদ্ম পুরস্কারের ( Padma Bhusan ) তালিকায়। রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নেবেন সিউড়ির ভাদু গানের শিল্পী।
'বড়লোকের বিটি লো' গানের স্রষ্টা তিনিই । ৮৮ বছর বয়সের শিল্পী এখনও গান গেয়ে ফেরেন সিউড়ির পথে পথে। তিনিই বাঁচিয়ে রেখেছেন বাংলার হারিয়ে যাওয়া ভাদু গান। সিউড়ির ভট্টাচার্য পাড়ার বাসিন্দা প্রবীণ লোকসঙ্গীত শিল্পী রতন কাহার। একসময় 'আলকাপ'-এর দলে যোগ দিয়েছিলেন। যাত্রাদলে 'ছুকরি' সাজার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর।
যৌবন থেকেই তিনি বেঁধেছেন অজস্র ভাদু ও ঝুমুর গান। পুরস্কার-শংসাপত্র যা পেয়েছেন, তা আর রাখার জায়গা নেই একচিলতে খড়ের ঘরে। তবে অভাব নিত্যসঙ্গী তাঁর। বৃদ্ধ শিল্পীর আজকাল আর শরীর ভাল থাকে না। কিন্তু মনের জোরেই গেয়ে চলেন গান। শিল্পীর কথায়, 'কে যেন ভেতর থেকে প্রেরণা দেয়' । শিল্পী বললেন, ' গানই আমার সবকিছু। জীবন তো কষ্টে কাটল। সরকারি ভাতা এবং অনুষ্ঠান করে যা পাই, তাতে কোনও রকমে চলে। '
প্রায় দু'হাজার গান লিখেছেন। পাহাড়ি সান্যাল তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন আকাশবাণীতে। কাজ করেছেন দূরদর্শনেও। ১৯৭২ সালে লিখেছিলেন কালজয়ী সেই গান, 'বড়লোকের বিটি লো'। ১৯৭৬ সালে গানটি রেকর্ড করেন স্বপ্না চক্রবর্তী। সেই সময় এই গান লোকের মুখে মুখে ফিরত ৷ পরবর্তীতে এই গানের রিমিক্স করেন বাদশা ! কোমর দোলান জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ। তবে গানের স্রষ্টা কে, জানতেন না অনেকেই। গান প্রকাশের সময়, গানটিকে প্রচলিত লোকগীতি বলে উল্লেখ করা হয় শুধুমাত্র। তখন র্যাপার বাদশার গাওয়া ‘বড় লোকের বেটি লো’ গানটি নিয়ে তুঙ্গে ওঠে বিতর্ক। পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খোলেন বাদশা। তিনি বলেন, এই গান রতন কাহারের তিনি জানতেন না। বাদশা বলেছিলেন, 'শুনেছি ওঁর অর্থনৈতিক অবস্থাও ভাল নয়। আমি ওঁকে সম্মান দিয়ে সাহায্য করতে চাই।' পরে বাদশা রতন কাহারকে ৫ লক্ষ টাকা দেন, যার সুদ থেকে তাঁর সংসার চলে এখন।
আরও পড়ুন :