কলকাতা: শান্তিনিকেতনে শিশু খুনের ঘটনায় উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ হল বিধানসভাও (Santiniketan Child Murder)। বিধানসভায় মুলতুবি প্রস্তাব বিজেপি বিধায়কদের। মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিবৃতি দাবি করলেন তাঁরা। পাল্টা স্লোগান তুলতে শোনা গেল তৃণমূল বিধায়কদেরও। প্রতিবাদে ওয়াকআউট বিজেপি-র। গোটা ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবিও তোলা হল। তা নিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে (West Bengal Assembly)।


বুধবার বিধাবসভার অধিবেশনে শান্তিনিকেতনে শিশুহত্যার ঘটনা উঠে আসে। অধিবেশনের প্রথমার্ধের শেষ ভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ প্রস্তাব পেশ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। তাতে তিনি অভিযোগ করেন, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ। শিশুর মৃত্যু ঘিরে যে ভাবে রহস্য দানা বেঁধেছে, কয়েক দিন পর পড়শির বাড়ি থেকে যে ভাবে শিশুর দেহ উদ্ধার হয়েছে, তা নিয়ে বিবৃতি দিন মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee)। কী ঘটেছে, কারা দায়ী, বিধানসভায় দাঁড়িয়ে জানাতে হবে তাঁকে। 


স্পিকার জানান, শুধুমাত্র বিবৃতি পড়তে অনুমতি দেওয়া হয়েছে শুভেন্দুকে। এ নিয়ে কোনও আলোচনার অবকাশ নেই। এর পরই  তুমুল হট্টগোল শুরু হয়।  বিজেপি-র বিধায়করা শিশুর ছবি নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। পাল্টা স্লোগান দেন তৃণমূল বিধায়করাও। এর পরই বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করে বাইরেও বিক্ষোভ দেখান বিজেপি বিধায়করা। সেখানে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, "পুলিশমন্ত্রী চোরেদের বাঁচানোর জন্য বিধানসভায় এসে মিথ্যা কথা বলতে পারেন। তিনি এত ব্যস্ত মানুষ! পুলিশমন্ত্রীকে এসে বলতে বলুন। একপেশে আচরণ করেন। কথায় কর্ণপাত করেননি।  আমরা ভিতরে প্রতিবাদ করেছি, বাইরেও করছি।"


শুভেন্দু আরও বলেন, "আমাদের সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং বিধায়ক অনুপ সাহার নেতৃত্বে ওই পরিবারের কাছে যাওয়া হয়েছে। কাল পর্যন্ত বিধানসভার অধিবেশন চলবে। তার পর বিধায়কদের প্রতিনিধি দলও যাবে। ১৮ তারিখ জিডি হওয়ার পরও শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। ওসিকে গ্রেফতার এবং এসপি-কে ক্লোজ করার দাবি জানাচ্ছি। দাবি জানাচ্ছি সিবিআই তদন্তের।"


এর পাল্টা বিজেপি-র বিরুদ্ধে অশান্তি সৃষ্টির অভিযোগ তোলেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, "ঘটনাটি অত্যন্ত খারাপ এবং দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু এটা সকলেই বুঝতে পারছেন যে, বিজেপি শুধুমাত্র গন্ডগোল এবং অস্থিরতা তৈরি করতেই এসব করছে। কারণ এর সঙ্গে সার্বিক আইনশৃঙ্খলার কোনও সম্পর্ক নেই। ব্যক্তিগত রোষ থেকে এমন কুৎসিত ঘটনা যদিও কেউ ঘটান, তার সঙ্গে রাজ্যের পুলিশ, প্রশাসন, সার্বিক আইনশৃঙ্খলার সম্পর্ক থাকতে পারে কী করে! যাঁরা এ কথা বলছেন, তাঁরা উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ গুজরাত দেখুন। ঘটনাটি খারাপ। সুস্থ মানসিকতার মানুষ বুঝবেন যে, ব্যক্তিগত আক্রোশ, বিকৃত মানসিকতা থেকে এমন ঘটনা ঘটলে, তা নিন্দনীয়। কিন্তু তা নিয়ে রাজনীতি করলে বুঝতে হবে, গন্ডগোল পাকানোর ইস্যু খোঁজা হচ্ছে।" 


বীরভূমের শান্তিনিকেতনে পাঁচ বছরের শিশুকে অপহরণ করে খুনের ঘটনার জেরে গতকাল এলাকায় তুমুল উত্তেজনা ছড়ায়। আজ এলাকার পরিস্থিতি থমথমে। বসানো হয়েছে ছ'টি পুলিশ পিকেট। চলছে পুলিশি টহলদারি। ধৃতের চরম শাস্তির দাবিতে সরব  শিশুর পরিবার। বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে শিশুর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বুধবারও এলাকায় তুমুল উত্তেজনা লক্ষ্য় করা যায়। পরিস্থিতি রীতিমতো থমথমে।