কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় এখনও প্রতিবাদ, নিন্দার ঝড় বইছে। সেই আবহে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের নিয়ে পরস্পর বিরোধী অবস্থান চোখে পড়ছে বিজেপি-র অন্দরে। একদিন আগেই জুনিয়র ডাক্তারদের সমালোচনা করেছিলেন বিজেপি-র বিধায়ক অশোক দিন্দা। এবার জুনিয়র ডাক্তারদের কটাক্ষ করলেন রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষও। (Dilip Ghosh)
আর জি কর কাণ্ডে অতি সম্প্রতিই কর্মবিরতি তুলে কাজে ফিরেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সেই নিয়ে দিলীপ কটাক্ষ ছুড়ে দেন তাঁদের উদ্দেশে। দিলীপের বক্তব্য, "জুনিয়র ডাক্তারদের সকলেই প্রশ্ন করছেন, এত নাটক করে, রাত জেগে কী হল? আর জি করের ঘটনায় কী পরিবর্তন হল? ক'জন সাজা পেয়েছেন? যাঁদের পদত্যাগ চেয়েছিলেন ওঁরা, তাঁরা প্রোমোশন পেয়েছেন। পিছন থেকে এই আন্দোলন চালাচ্ছেন যাঁরা, তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাঁচানোর জন্য এসব নাটক করছেন না তো?" (RG Kar Protests)
এখানেই থামেননি দিলীপ। তাঁর বক্তব্য, "রাত জাগো, প্যান্ডেল জ্বালাও, রাতে বাতি জ্বালিয়ে ছবি তুলে চলে আসি, এই জন্যই কি দেড় মাস ধরে বাংলার মানুষ কষ্ট পেলেন? স্বাস্থ্য পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেল হাসপাতালগুলিতে, এর জবাব দিতে হবে না? এই যে আন্দোলন করে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলা হল, তাতে কী লাভ হল? আপনারা সরকারের বিরুদ্ধে একটা কথাও বলছেন না। সন্দীপ ঘোষও অনুব্রতর মতো ছাড়া পেয়ে যাবেন। বিনীত গোয়েল দিব্যি খাবেন, ঘুরে বেড়াবেন। সরকারের কি কোনও দোষ নেই? স্বাস্থ্য়মন্ত্রীর পদত্যাগ হবে না? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশমন্ত্রী, তাঁর সাজা হবে না? কেন মানুষকে ধোঁকা দিয়ে এভাবে আন্দোলনের নামে রাস্তায় নামানো হচ্ছে? পুজো বন্ধ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। মানুষ এই আন্দোলন থেকে কী পেলেন?"
জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের 'পোস্টমর্টেম'ও এদিন দাবি করেন দিলীপ। তিনি বলেন, "এত বড় আন্দোলন, এত বড় শো, রোজ একবার করে রাস্তায় এসে নাটক, তালি দেওয়া। রেজাল্ট কী হল? এটা সোপ অপেরার মতো হচ্ছে কি? রেজাল্ট চাই, পরিবর্তন চাই। আবার কোনও মহিলা ডাক্তারের উপর এমন হবে না, কেউই কি গ্যারান্টি দিতে পারবেন? হাসপাতালে দাদাগিরি, গুন্ডামি চলছে। ভয়ের পরিবেশ রয়েছে। বেড পেতে, ওষুধ পেতে, ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে টাকা দিতে হয়। এর কি কোনও পরিবর্তন হবে? সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছেন।"
একদিন আগে বিজেপি বিধায়ক অশোকও জুনিয়র ডাক্তারদের আক্রমণ করেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, "নিজেদের স্বার্থে আন্দোলন করেছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। পাঁচটি দাবির মধ্যে অভয়ার দোষীদের ফাঁসির উল্লেখ নেই, যা এক নম্বর দাবি হওয়া উচিত ছিল। ফাঁসি না হলে ধর্মঘট, আন্দোলন চালিয়ে যাব বলা উচিত ছিল। সেটা করা হয়নি। তাদের নিজেদের দাবি ফল হয়েছে ৮০ শতাংশ, যা এমনিই হতো।"
দিলীপ এবং অশোকের মন্তব্যে যদিও আমল দিতে নারাজ চিকিৎসক তথা অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের সদস্য মানস গুমটা। তাঁর কথায়, "কী বলব বলুন তো? হাস্যকর বিষয় তুলেছেন। মানুষ ন্যায় বিচার চেয়েছেন এই নৃশংস হত্যার ঘটনায়। যাঁরা সরাসরি যুক্ত এই ঘটনায়, প্রমাণ লোপাটে যাঁরা সচেষ্ট ছিলেন, প্রত্যেকের শাস্তির জন্যই এই আন্দোলন। জীবিত কালে পশ্চিমবঙ্গের বুকে এমন আন্দোলন দেখিনি। যাঁরা এসব বলছেন, তাঁরা মানুষের মধ্যে নেই অথবা রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তাই এমন মন্তব্য করছেন।"
ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের সদস্য, চিকিৎসক কৌশিক চাকি বলেন, "অশোক দিন্দা বোধহয় ক্রিকেট খেলতেন। এখন রাজনীতি করছেন। অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিই এই আন্দোলন থেকে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছেন। ডাক্তাররা কিন্তু এ ব্যাপারে সচেতন। কাউকে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে দিতে রাজি নই আমরা। এই আন্দোলন থেকে মানুষ সরে যাচ্ছেন যাঁরা বলছেন, তাঁরা মানুষের সঙ্গে সংযুক্তই নন।"
তবে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন নিয়ে দিলীপ এবং অশোকের চেয়ে তাঁদের অবস্থান ভিন্ন বলে জানিয়েছেন বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। তাঁর দাবি, কে, কী বলছেন, তা জানা নেই তাঁর। আন্দোলনে প্রথম থেকেই সহমর্মিতা, সমর্থন জানিয়েছেন তাঁরা, সহযোগিতাও করেছেন। তবে শমীক জানিয়েছেন তাঁদের একটাই দাবি, 'তৃণমূলের বিসর্জন'।