সিঙ্গুর: দেড় দশক পর ফের সিঙ্গুর ঘিরে সরগরম বঙ্গ রাজনীতি। টাটাদের সুদ-সহ ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে আরবিট্রাল ট্রাইব্যুনাল। সেই নিয়ে দোষারোপ, পাল্টা দোষারোপের পালা চলছেই। সেই আবহে এবার মুখ খুললেন সিঙ্গুর আন্দোলনের অন্যতম নেতা, এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে চলে যাওয়া 'সিঙ্গুরের মাস্টারমশাই' রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। গোটা পরিস্থিতির জন্য পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারকেই দায়ী করলেন তিনি। (Rabindranath Bhattacharjee) 


টাটাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া নিয়ে একদিকে তৃণমূলকে যেখানে বিঁধে চলেছে বিজেপি, সেখানে একেবারেই সেই পথে হাঁটলেন না রবীন্দ্রনাথ। এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "এর দায় সম্পূর্ণ ভাবে বামফ্রন্টের। আমরা শিল্পের বিরোধী ছিলাম না। পুলিশি অত্যাচারের বিরোধী ছিলাম। জোর করে জমি কেড়ে নেওয়ার বিরোধিতা করেছিলাম আমরা। কৃষকদের পক্ষে ছিলাম। আজ যে টাকা দিতে হচ্ছে, এর দায় সম্পূর্ণ ভাবে বামফ্রন্ট সরকারের।" (Singur Movement)


সিঙ্গুর তথা গোটা বাংলায় মমতার জন্য শিল্পের যাবতীয় সম্ভাবনা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বলে দাবি বিজেপি নেতৃত্বের। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য, "দল হিসেবে যখন আন্দোলন করেছিলেন মমতা, তার প্রতিক্রিয়া কিছুটা হিসেবেও টাটাদের বিরুদ্ধে গিয়েছিল, তা অস্বীকারের উপায় নেই। কিন্তু আন্দোলন হয়েছিল জোর করে জমি কেড়ে নেওয়া, পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে। পরে তা টাটাদের বিরুদ্ধে চলে যায়। তবে ত্রুটি তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারেরই ছিল।"


আরও পড়ুন: Singur Movement: দেড় দশক পরও টাটকা ক্ষত, কী বলছে সিঙ্গুর, খোঁজ নিল এবিপি আনন্দ


মমতা কোনও ভাবেই শিল্প আটকাতে যাননি, কিন্তু সিঙ্গুর আন্দোলন তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে গিয়েছে বলে মন্তব্য করেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর কথায়, "বর্তমান সরকার শিল্প আটকাতে যায়নি। শিল্প স্থাপন করতে চেয়েছে। সমস্ত শিল্পপতিকে আহ্বানও করা হয়েছে। কিন্তু যে কারণেই হোক, তা ফলপ্রসূ হয়নি। বাংলায় দীর্ঘদিন এই তৃণমূল সরকারের আমলে কোনও শিল্পপতি এসে উল্লেখযোগ্য ভাবে শিল্পের নির্মাণ করেননি।"


তবে রবীন্দ্রনাথ তৃণমূলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেও, বিজেপি-র তরফে লাগাতার জোড়াফুল শিবির, বিশেষ করে মমতাকে নিশানা করা হচ্ছে। দলের সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, "নকৃষকের জমিকে সামনে রেখে এরা শিল্প বন্ধ করেছিল। আজ কত ছেলে-মেয়ে বেকার। ট্রেনিংয়ের পর সার্টিফিকেট নিয়েছিল তারা। সেই সার্টিফিকেট জলে চলে গেল। কেউ গুজরাত, কেউ উত্তরপ্রদেশ চলে গিয়েছে। বলা হয় পৃথিবী গোল। এত বছর পর আজ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।" আবার জনগণের করের টাকায় ক্ষতিপূরণ দিলে বৃহত্তর আন্দোলন হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকার, একসময় সিঙ্গুর আন্দোলনে মমতার ছায়াসঙ্গী হিসেবে দেখা গিয়েছিল যাঁকে। 


এই গোটা বিতর্কে সিপিএম নেত্রী মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, "শুধু সিঙ্গুরে নয়, গোটা রাজ্যে ক্ষুদ্র-ছোট এবং মাঝারি শিল্পেও পিছিয়ে গিয়েছে বাংলা। চাষের যা হাল, তাতে আগামী দিনে কারখানা এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র বাড়ানো ছাড়া বাংলার বেকারদের কাজের জায়গা আর হবে না। শুধু বাংলা কেন, গোটা দেশের ক্ষেত্রেই এ কথা প্রযোজ্য। তৃণমূল হোক বা বিজেপি, যে সরকার চোখ বন্ধ রেখে শুধু লুঠ করে ভোটে জেতার কথা ভেবে যায়, তাদের দ্বারা কাজ হতে পারে না।"


তবে সিঙ্গুর নিয়ে একদিকে যেখানে রাজনৈতিক তরজা চরমে, সেই সময় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা কার্যতই হতাশা ব্যক্ত করেছেন। যে জমি চাষযোগ্য নয়, সেখানে শিল্প হওয়াই কাম্য বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। কেউ কেউ আবার দাবি করেছেন, জমি চাষযোগ্য করে দেওয়া হোক ফের, নুড়ি-কাঁকর সরিয়ে উর্বরতা ফিরিয়ে আনা হোক। তাহলে আবার চাষের কাজে ফিরতে পারেন তাঁরা।